
কুইন এলিজাবেথ দ্য সেকেন্ড।
এক-দু’জন নয়, সিংহাসনে আরোহণের পর সাত দশকে ১৫ জন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়েছেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এসব প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় রয়েছেন ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত উইনস্টন চার্চিল থেকে শুরু করে রয়েছেন নব-নির্বাচিত লিজ ট্রাসও। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, গোটা বিশ্বে এটি অনন্য এক রেকর্ড। দেশটির বিগত সরকার প্রধানরা বলেছেন, একজন দক্ষ পরামর্শক-পথ প্রদর্শক বা অভিভাবক হিসেবে রানী এলিজাবেথ অতুলনীয়। শুধু জনসম্মুখেই নন, রূদ্ধদ্বার বৈঠকেও রানী তার সরকার প্রধানদের সাথে সবসময়ই হাস্যজ্জ্বল ও বন্ধু বৎসল।
সিংহাসনে আরোহণের পর, রানীর প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। সে সময়, অভিভাবকের মতো তরুন এ সম্রাজ্ঞীকে আগলে রেখেছিলেন সরকার প্রধান চার্চিল। এরপরে স্বল্প মেয়াদে ক্ষমতায় আসা অ্যান্থনি অ্যাডেন ক্ষমতায় এসেই ১৯৫৬ সালে দেন সুয়েজ খালে সেনা পাঠানোর নির্দেশ। সে সময়, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ভাঙ্গার জন্য অঞ্চলটিতে বাড়ছিলো বিদ্রোহ। ১৯৬৪ সালে, হ্যারল্ড উইলসন ছিলেন রানীর শাসনামলে প্রথম লেবার প্রধানমন্ত্রী। সাংবিধানিক নীতিমালা অনুসারে সরকার গঠনে ভূমিকা রাখতে পারেন, রানী ২য় এলিজাবেথ। উৎসাহ বা জাতীয় ইস্যুতে পরামর্শও দিতে পারেন তিনি। এমনকি, বিতর্কিত ইস্যুতে সরকার প্রধানদের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি তিনি।
এলিজাবেথের দীর্ঘ শাসনামলের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দ্য আইরন লেডি মার্গারেট থ্যাচার। সংবাদকর্মী ও জীবনী লেখকদের কলামে উঠে এসেছে- এ সরকারের গঠনে খুব একটা খুশি ছিলেন না রানী, ছিল সংশয়ও। কিন্তু, খুব ভালোভাবেই তিন মেয়াদে ক্ষমতা সামলেছেন আয়রন লেডি।
প্রায় সব সরকার প্রধানই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, রানীর পরামর্শ তাদের সামনে উন্মোচন করেছে রাষ্ট্র পরিচালনার নিত্যনতুন দিক। বাকিংহাম প্যালেসের চায়ের আসরেই তারা শিখেছেন পররাষ্ট্র সম্পর্ক, অর্থনীতি এবং বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের নানা কৌশল।
ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বলেন, আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি; তখনও রানী জন সমাগমে নিয়মিত আসতেন। তার প্রত্যেকটি পরামর্শ শুধু কার্যকরীই নয়, তিনি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন মানুষ।
দেশটির আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, যখনই লক্ষ্য অর্জনের বিষয়গুলো রানীর সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারবেন; তিনি হবেন আপনার একান্ত উপদেষ্টা। ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিয়ে, তিনিই হবেন অভিভাবক।
একটি দেশের ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী, তাদের ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার অধিকারী ছিলেন নিঃসন্দেহে। দীর্ঘ সাত দশক সব ভেদাভেদ ভুলে তাদের সাথে কাজ করেছেন রানী ২য় এলিজাবেথ। দেশটি প্রশাসনের মধ্যমণি এখনও সম্রাজ্ঞী; বয়সের সীমারেখা উহ্য রেখে রাষ্ট্রপ্রধানদের দিয়ে চলেছেন পরামর্শ, করছেন হুঁশিয়ারিও।
রানী এলিজাবেথের হাতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীরা:
১. উইনস্টন চার্চিল ( কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৫১-১৯৫৫)

২. অ্যান্থনি ইডেন (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৫৫-১৯৫৭)

৩. হ্যারল্ড ম্যাকমিলান (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৫৭-১৯৬৩)

৪. অ্যালেক ডগলাস-হোম (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৬৩-১৯৬৪)

৫. হ্যারল্ড উইলসন (লেবার পার্টি, ১৯৬৪-১৯৭০)

৬. এডওয়ার্ড হিথ (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৭০-৭৪)

৭. হ্যারল্ড উইলসন (লেবার পার্টি, ১৯৭৪-১৯৭৬)

৮. জেমস কালাহান (লেবার পার্টি, ১৯৭৬-১৯৭৯)

৯. মার্গারেট থ্যাচার (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৭৯-১৯৯০)

১০. জন মেজর (কনজারভেটিভ পার্টি, ১৯৯০-১৯৯৭)

১১. টনি ব্লেয়ার (লেবার পার্টি, ১৯৯৭–২০০৭)

১২. গর্ডন ব্রাউন ( লেবার পার্টি, ২০০৭-২০১০)

১৩. ডেভিড ক্যামেরন (কনজারভেটিভ পার্টি, ২০১০-২০১৬)

১৪. তেরেসা মে (কনজারভেটিভ পার্টি, ২০১৬-২০১৯)

১৫. বরিস জনসন (কনজারভেটিভ পার্টি, ২০১৯-২০২২)

/এসএইচ



Leave a reply