প্রতিবাদরত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাকিব মোল্লা।
স্টাফ করেসপনডেন্ট, নরসিংদী:
মনোহরদীতে মুক্তিযোদ্ধা বীর নিবাসে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
এ অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে গত ৩০ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেন মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ উল্লাহ মোল্লার স্ত্রী রুবি বেগম। অভিযোগের ১২ দিন পরও প্রতিকার না পেয়ে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) উপজেলা পরিষদের সামনে ফেস্টুন নিয়ে বসে প্রতিবাদ জানান বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাকিব মোল্লা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বীর নিবাস পরিদর্শনে যান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
লিখিত অভিযোগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সাকিব মোল্লার সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাসুলী কান্দি গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ উল্লাহ মোল্লার স্ত্রী রুবি বেগম মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাসে একটি ঘর বরাদ্দ পান। গত শনিবার থেকে এ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সুমন বর্মণ। সরকারী চুক্তি অনুযায়ী মানসম্পন্ন নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কথা থাকলেও এই বীর নিবাস নির্মাণে তা মানা হচ্ছিলো না। নির্মাণকাজে খুবই নিম্নমানের ইট, বালু, কণাসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের কারণে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের নিকট নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে অবগত করলে; তারা যেমনটা দেয়া হচ্ছে এটাই যথেষ্ট বলে তাদের জানায়। এসব সামগ্রী দিয়েই কাজ চলবে এবং এই বিষয়ে কোন অভিযোগ না করার জন্য হুমকিও দেয়া হয় অভিযোগ আছে।
এছাড়াও নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য থাকার ঘর, টয়লেট, টিউবওয়েল বসানোর শর্ত দেয়াসহ আধা কিলোমিটার দূরত্বের সড়ক থেকে ইট, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী বহন করার শর্তও দেয় ওই ঠিকাদার। যা দরিদ্র ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষে নির্মাণ সামগ্রী বহনের খরচ মেটানো সম্ভব নয়।
সরেজমিন তদন্তপূর্বক ঠিকাদারের এ অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে গত ৩০ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রুবি বেগম। অভিযোগ দেয়ার ১২ দিনেও কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় সোমবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ফেস্টুন নিয়ে বসে প্রতিবাদ জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ উল্লাহ মোল্লার সন্তান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সাকিব মোল্লা। এ সময় সাকিব প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিয়ে আসা ইট, বালুসহ নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী উপস্থিত লোকজনের সামনে প্রদর্শন করেন।
সাকিব মোল্লা বলেন, আমি ঢাকায় লেখাপড়া করি। এলাকায় কোনো ঘরবাড়ি না থাকায় নানার বাড়িতে থাকি। একদিকে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যব্হার করে কাজ শুরু করা, অপরদিকে সামগ্রী বহনের ব্যয় করার জন্যও চাপ দেয়া হয়। এ অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে আমার মা লিখিত অভিযোগ করেন। পরে একাধিকবার মৌখিকভাবে অবগত করা হয় কিন্তু কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় আমি এখানে অবস্থান করে প্রতিবাদ জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সরেজমিন তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমিও মিটিং শেষে ঘটনাস্থলে যাবো, অনিয়মের সত্যতা পেলে কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন রাজি বলেন, সুমণ বর্মণ নামের একজন এই বীর নিবাস নির্মাণ কাজের ঠিকাদার। ইউএনও স্যার আমাকে বিষয়টি সরেজমিন দেখার জন্য বলেছেন, আমি বীর নিবাসে যাচ্ছি, সেখানে গিয়ে অভিযোগে সম্পর্কে জেনে বিস্তারিত জানাবো।
/এসএইচ
Leave a reply