সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা প্রতিনিধি :
ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনে মুর্শিদাবাদে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। বাবা ও ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে শামসেরগঞ্জের বাড়ি থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম হরগোবিন্দ দাস(৭৪) ও চন্দন দাস(৪০)। এছাড়াও গতকাল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সুতির সাজুর মোড়ে গুলিবিদ্ধ কিশোরেরও মৃত্যু হয়েছে।
বিক্ষোভের সময় আগুনে পোড়ানো হয়ছে একাধিক প্রাইভেট গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পুলিশের গাড়ি। রেহাই পায়নি অ্যাম্বুলেন্সও। লুঠপাট করা হয়েছে বহু দোকান ও বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।
তবে, সবচেয়ে বেশী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর এবং সুতি এলাকায়। সেখানে বিক্ষোভকারীদের দ্বারা সাধারণ মানুষের যানবাহন ও সম্পত্তি লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন বহু পুলিশ সদস্য।
পুলিশকে লক্ষ্য করে হাত বোমা, পেট্রোল বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালেও মুর্শিদাবাদ জেলাতেই ফের শুরু হয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। বিক্ষোভকারীরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়াও ভাঙচুর করা হয় বিডিও অফিসসহ জেলার সমস্ত সরকারি অফিসগুলোতেও।
রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজিব কুমার শনিবার (১২ এপ্রিল) সাংবাদিকদের জানান, মুর্শিদাবাদের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কোন জাতি ধর্ম দেখবে না। বেশ কিছু জায়গায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেখামাত্র গুলির নির্দেশে দেয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
এর আগে, স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জুমার নামাজের পর ‘জাতীয় সড়ক-১২’ অবরোধ করে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভে সামিল হয়। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বেলা বাড়তেই মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যায়। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে পাথর ছোড়া হয় এবং আগুন দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় রাতেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের নির্দেশে নামানো হয় সশস্ত্র বিএসএফ সদস্যদের।
এর আগে, শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। আহত যুবকের নাম মোশারফ হোসেন। তার বাবা জানান, গোলমালের সময় ছেলে রাস্তায় জিনিস কিনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। তার বুকে গুলি লাগে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার সকালে তাকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের জেলা প্রশাসক রাজর্ষি মিত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘ইতোমধ্যে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, বিক্ষোভের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ধুলিয়ানগঙ্গা ও নিমতিতা স্টেশনের মাঝে ট্র্যাক অবরোধের জেরে এদিন অন্তত পাঁচটি ট্রেন আটকে পড়েছে।
/এআই
Leave a reply