গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হামাস যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর এই ঘোষণা দিলেন তিনি। রোববার (২০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে ইউএস সংবাদমাধ্যম সিএনএন নিউজ এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)-কে গাজায় হামলা জোরদারেরও নির্দেশ দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় রাতে এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধের জন্য যখন চরম মূল্য দিতে হচ্ছে তখন ইসরায়েলের জয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরায়েলের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই এবং বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত আমাদের অস্তিত্বের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে হবে’।
সম্প্রতি, হামাস কর্তৃক ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কথা উল্লেখ করে গাজায় বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নেতানিয়াহু। বলেন, ‘আমরা যদি এখন হামাসের দাবি মেনে নিই, তাহলে আমাদের সৈন্যরা, শহীদরা এবং আহত বীররা যে বিশাল অর্জন করেছেন, তা একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে’।
তিনি যুক্তি দেন যে, হামাসকে গাজায় থাকতে দেয়া মানে ইউএস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ ভিশন কখনোই বাস্তবায়িত হবে না। ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে অন্য দেশে সরিয়ে নিয়ে উপকূলীয় এই এলাকাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়ারা’ হিসেবে পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতানিয়াহু ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির আবাসস্থল এই সংকীর্ণ ভূখণ্ডে আমেরিকার মালিকানার কথাও উল্লেখ করেছেন।
তবে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছে হোস্টেজ ফ্যামিলিজ ফোরাম হেডকোয়ার্টার্স।
ফোরামটি বলেছে, অনেক কথা ও স্লোগান দিয়ে সহজ সত্যি ঢাকার চেষ্টা করা হবে—নেতানিয়াহুর বাস্তবে কোনো পরিকল্পনা নেই। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে প্রশ্ন করার সময় দেয়া হয়নি—নাহলে তাকে মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো: ৫৯ জন জিম্মিকে তাৎক্ষণিকভাবে ফিরিয়ে আনার জন্য ইসরায়েল ঠিক কী করছে? মনে হয় না, এই প্রশ্নের উত্তর প্রেসিডেন্টের কাছে রয়েছে। কারণ, মানুষ মারা ছাড়া ইসরায়েল আর কিছুই দেখে না।
এদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় গতকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) স্থানীয় সময় ভোর থেকে রাত পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৪ জন। সেই সাথে আহত হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক ফিলিস্তিনি। হামলায় হতাহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
বর্তমানে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার কাছে শাবৌর ও তেল আস সুলতান এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে আইডিএফ। সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই দুই ঘাঁটি থেকেই পরিচালনা করা হয়েছে সর্বশেষ এই হামলা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডাব্লিউএ-এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় ৫১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, অফিসিয়ালি এই সংখ্যা ৬১ হাজার ৭শ’। তবে, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে আরও অনেকে।
/এআই
Leave a reply