এআই জেনারেটেড
ভালোবাসা একটি গভীর, জটিল এবং বহুস্তরবিশিষ্ট আবেগ। মনোবিজ্ঞানী রবার্ট স্টার্নবার্গের মতে, ভালোবাসা গঠিত হয় তিনটি মূল উপাদান দিয়ে—আকর্ষণ, অন্তরঙ্গতা এবং অঙ্গীকার। এই তিন উপাদানের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে তৈরি হয় ভালোবাসার নানা রকমফের।
তিনটি উপাদানে গঠিত ভালোবাসা
আকর্ষণ:
এটি শারীরিক আকর্ষণ ও রোমাঞ্চের প্রতিফলন। প্রেমের শুরুতে এটি প্রবল থাকে।
অন্তরঙ্গতা:
এটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। একে অপরকে জানার, অনুভূতি ভাগাভাগির জায়গা এটি।
অঙ্গীকার:
এটি দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের জন্য দুজনের নেয়া সচেতন সিদ্ধান্ত।
তিনটি উপাদান একত্রে থাকলে একে বলা হয় “পরিপূর্ণ ভালোবাসা” (Consummate Love)—যেখানে আকর্ষণ, ঘনিষ্ঠতা ও অঙ্গীকার সবই বিদ্যমান। কিন্তু বাস্তবে, অনেক সম্পর্কেই সব উপাদান একসঙ্গে থাকে না।
ভালোবাসার বিভিন্ন ধরন
১. লাইকিং বা পছন্দ করে যাওয়া :
এমন সম্পর্কে শুধু অন্তরঙ্গতা থাকে। কোনো রোমান্টিক আকর্ষণ বা অঙ্গীকার নেই। সাধারণত এটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
২. ইনফ্যাচুয়েশন বা মোহ:
শুধু আকর্ষণ থাকে। হঠাৎ ভালো লেগে যাওয়া। এটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না।
৩. ফ্যাচুয়াস লাভ বা উদ্দেশ্যহীন প্রেম:
আকর্ষণ ও অঙ্গীকার থাকে, কিন্তু অন্তরঙ্গতা থাকে না। সম্পর্কের গভীরতা নেই, তবুও একে অপরকে ভালোবাসার দাবি করা হয়।
৪. এম্পটি লাভ বা ফাঁকা ভালোবাসা :
শুধু অঙ্গীকার থাকে। দাম্পত্য বা সামাজিক বাধ্যবাধকতায় সম্পর্ক টিকে থাকে, কিন্তু প্রেম বা ঘনিষ্ঠতা থাকে না।
৫. রোমান্টিক লাভ :
আকর্ষণ ও অন্তরঙ্গতা থাকে, কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। এটি তরুণদের মাঝে বেশি দেখা যায়।
৬. কনসামেট লাভ:
সব উপাদানই থাকে। এটি আদর্শ প্রেমের রূপ।
প্রেমিক-প্রেমিকার ধরণ
প্রেমের আরও গভীর বিশ্লেষণ দিয়েছেন গবেষক লি। তিনি প্রেমিকদের ছয়টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেন:
১. প্র্যাগমা:
বাস্তববাদী প্রেম। ভালোবাসার সঙ্গে সামঞ্জস্য, সামাজিক মর্যাদা, ভবিষ্যৎ লক্ষ্য মিলিয়ে দেখে।
২. ম্যানিয়া:
অস্থির ও আবেগপ্রবণ প্রেম। প্রেমে থাকলে ঘুম হারাম, বিচ্ছেদে মানসিক বিপর্যয়।
৩. আগাপে:
নিঃস্বার্থ ও আত্মত্যাগমূলক ভালোবাসা। নিজের থেকে বেশি গুরুত্ব দেয় সঙ্গীর সুখকে।
৪. ইরোস:
শরীর ও আবেগে আবিষ্ট প্রেম। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়া এই শ্রেণিতে পড়ে।
৫. লুডাস:
খেলাধুলার মতো প্রেম। প্রতিশ্রুতি নেই, একাধিক সম্পর্ক চলে।
৬. স্টর্জ:
বন্ধুত্ব থেকে ধীরে ধীরে প্রেম। ব্রেকআপ হলেও বন্ধুত্ব থাকে।
সম্পর্কের কাঠামো: A, H ও M ফ্রেম
মনোবিজ্ঞানী ডেভিডসন সম্পর্কের গঠনকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন:
A-ফ্রেম:
দুজন একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একজন বদলালে অন্যজন টালমাটাল হয়ে পড়ে।
H-ফ্রেম:
দুজনই স্বাধীন। আলাদা জীবন যাপন করে। সম্পর্ক সহজে ভেঙে যায়, আবেগের প্রভাব কম।
M-ফ্রেম:
পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হলেও আলাদা অস্তিত্ব বজায় থাকে। এটি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক।
ভালোবাসা একেকজনের কাছে একেক রকম। কারও জন্য এটি পবিত্র, কারও কাছে তা খেলো। স্টার্নবার্গ ও অন্যান্য গবেষকদের বিশ্লেষণ আমাদের ভালোবাসা ও সম্পর্ককে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে। প্রেম টিকিয়ে রাখতে চাইলে প্রয়োজন আন্তরিকতা, বিশ্বাস এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।
/এমএমএইচ
Leave a reply