প্রাক্তন ২ সিইসিকে গ্রেফতার প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য কি না এবং কী বার্তা দেয়? বিশ্লেষকরা যা বলছেন

|

লাভলী বিথী:

২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন এবং ২০১৮-এ রাতের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে এক প্রকার ধ্বংস করা হয়। চব্বিশের ডামি ভোট সেই প্রক্রিয়ায় শেষ পেরেক ঠুকে। এসব বিতর্কিত নির্বাচনের কারিগর যে কয়জন, তার মধ্যে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ও হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গুরুতর গাফিলতি ও পক্ষপাতের অভিযোগে আইনের মুখোমুখি করা হয়েছে তাদেরকে।

সাবেক এ দুই সিইসিকে গ্রেফতারের ঘটনা ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তবে, আটকের প্রক্রিয়া গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন তারা।

এমন পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে কেউ নির্বাচন কমিশনার হতে আগ্রহী হবে না বলে শঙ্কা বিশ্লেষকদের। তাদের মতে, নির্বাচন কমিশনারদের বিচার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে হতে হবে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাদেরকে সমন দিলেই তারা আদালতে গিয়ে হাজির হতো আমি নিশ্চিত। এটা করা হয়নি। কিন্তু একজনকে হেনস্তা করা হয়েছে। যেটা চরম নিন্দনীয়। আমরা কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার সুপারিশ করিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বললেন, এটা একটা সাংবিধানিক পদ। জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হলে সংসদই হচ্ছে তার একমাত্র জায়গা। এই দায়িত্বগুলোতে যারা থাকবে, তাদের জবাবদিহিতা বিষয়টাকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করাই তো যুক্তিসঙ্গত। বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে প্রতিশোধের যে রাজনীতি, এটার ভুক্তভোগী হয়ে যাচ্ছে সবাই।

নিবার্চন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম বললেন, এই ঘটনার পরে এখনকার কমিশন কেন ভবিষ্যতে যে কমিশন আসবে প্রত্যেকের মধ্যে এক ধরনের ভাবনা কাজ করবে যে আমাদেরকে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে হবে।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি অনিয়মের অভিযোগ করতেই পারেন। তবে ফৌজদারি মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হলেও আটকের প্রক্রিয়া ইসির ওপর একধরনের চাপ সৃষ্টি করবে।

আব্দুল আলীম বলেন, অনেকেই ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশনার হইতে চাইবেন না। কারণ, বাংলাদেশে নির্বাচন সবসময়ই একটা বিতর্কিত ব্যাপার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের নির্বাচনও যদি দেখা হয়, যে দল হেরে গেছে তারা কিন্তু প্রশ্ন তুলেছে সবসময়। এই কারণেই যদি কারও নাম প্রস্তাব হয়, অনেকে দ্বিতীয়বার ভাবনা-চিন্তা করবে, তৃতীয়বার চিন্তা করবে।

ড. সাব্বির আহমেদ বলেছেন, তাদের ওপরে এটা একটি মানসিক চাপ হিসেবে তো থাকবেই। কেউ হয়তো দায়িত্ব নেবে কিন্তু তাকে প্রস্তুত থাকতে হবে যে নির্বাচন শেষ করার পর দেশে ছেড়ে তাকে বিদেশ চলে যেতে হবে। এইভাবে তো একটা দেশ আগায় না। এইভাবে প্রতিষ্ঠান আগায় না।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম জুড়িশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান আছে। দায়িত্ব থাকাকালীন ইসি যদি অসদাচরণ করে তাহলে সুপ্রিম জুড়িশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। ওটাই বিধান। কিন্তু দুর্ভাগ্য ওটা কার্যকর ছিল না।

বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র তুলে ধরে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলে ইসিকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হবে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply