
সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা প্রতিনিধি :
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে তাঁর ব্যবহারকৃত সামগ্রী। স্থানীয় সময় সোমবার (৭ জুলাই) এমন অভিযোগ জানিয়ে চুরুলিয়ায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী আলি রেজা।
চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমীকে অন্ধকারে রেখে কবির স্মৃতিচিহ্নগুলো ওই জেলারই আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আলী রেজার।
কবির জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়াতেই রয়েছে তার ব্যবহার করা নানা ধরনের স্মৃতিচিহ্ন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই পুরোনো মাটির বাড়িটি ১৯৫৬ সালে ভেঙে ফেলে, ১৯৫৮ সালে সেখানেই তৈরি করা হয় একটি বহুতল ভবন— যা নজরুল একাডেমী নামে পরিচিত।
এই নজরুল একাডেমীর নীচ তলায় রয়েছে একটি সংগ্রহশালা। এখানে রয়েছে জাতীয় কবির হাতে লেখা বহু পান্ডুলিপি, প্রথম প্রকাশিত গল্প, কবিতা এবং গানের পত্রিকার কপি, তার ব্যবহৃত পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, বিভিন্ন সময়ে পাওয়া সন্মাননা, প্রমিলা দেবীর ব্যবহৃত খাট। আর দেয়ালে রয়েছে কবির বিভিন্ন সময়ের ছবি।
ওই সংগ্রহ শালায় রয়েছে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট কবির মৃত্যু ও পরবর্তী শবযাত্রার আলোকচিত্র। বছরভর তা দেখতে এই একাডেমীতে ভীড় জমান সাধারণ মানুষ থেকে সাহিত্য গবেষকরা। কিন্তু কবির সেসব স্মৃতিচিহ্নগুলো ওই জেলারই আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিষয়টি সামনে আসতেই একদিকে যেমন চুরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দারা ফুঁসে উঠেছেন, তেমনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নজরুল একাডেমী কর্তৃপক্ষ।
তাদের দাবি, কোনও অবস্থায় সেই সমস্ত জিনিস গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। যদিও বিতর্ক ওঠার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মিউজিয়ামকে বিশ্বমানের করে তোলার লক্ষ্যেই সেটি সংস্কারের কাজে হাত দেয়া হবে। তাই আপাতত মিউজিয়ামে থাকা কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। সংস্কারের কাজ শেষ হলেই তা পুরনো জায়গায় রেখে আসা হবে।
কাজী আলি রেজা জানান, ‘শুধু ভারতবর্ষ নয়, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর বহু মানুষ এই মিউজিয়াম দেখতে আসেন। সকলেরই এই মিউজিয়াম দেখার প্রতি একটা আগ্রহ থাকে। কিন্তু বর্তমানে সেই মিউজিয়ামটাকেই বলা হচ্ছে, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে। অর্থাৎ এই মিউজিয়ামে থাকা কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু আমরা বলেছি, এটা কোনোমতেই সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই এক ট্রাক ভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরেকটি ট্রাক ভর্তি করে সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা সেটা বাধা দিয়েছি।’
কাজী আলি রেজার অভিমত, ‘কবিতীর্থ চুরুলিয়া মানুষের কাছে একটি আবেগ। কবির মিউজিয়াম থেকে সেসব জিনিস বিশ্ববিদ্যালয় চলে গেলে এটা অন্ধকার হয়ে যাবে। তখন আর কোনা মানুষ এখানে আসবেন না।’
/এআই



Leave a reply