বিশ্বের প্রথম আধুনিক রাজধানী হিসেবে সম্পূর্ণভাবে খরার আশঙ্কায় কাবুল

|

পানির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক আফগান কন্যা। (নভেম্বর ১৩, ২০২১) ছবি: সিএনএন নিউজ।

সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কাবুলের শুষ্ক পাহাড়ের নীচে আফগানিস্তানের কাবুলের বেশিরভাগ পরিবারের পানির সন্ধান ও তা সংরক্ষণের দৈনন্দিন সংগ্রাম শুরু হয়। কাবুলের এই সংকট বিশ্বের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত নগরায়ন কীভাবে একটি শহরের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে তার নজির স্থাপন করছে।

পানির ট্যাঙ্কারের শব্দ শুনে ৪২ বছর বয়সী রাহিলা তার চার সন্তান নিয়ে রাস্তায় ছুটে যান। তাদের ভাঙা বালতি ও জেরিক্যানে পানি ভরতে হবে।

রাহিলা বলেন, ‘আমাদের কাছে পানীয় জলের কোনো উৎস নেই। পানির সংকাট আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করছে।’

পানির ট্যাঙ্কার ভর্তি করতে সংগ্রামরত এক আফগান কিশোর। সূত্র: সিএনএন নিউজ।

এনজিও মার্সি কর্পসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাবুল শীঘ্রই বিশ্বের প্রথম আধুনিক রাজধানী হতে যাচ্ছে যেখানে সম্পূর্ণভাবে পানি শুকিয়ে যাবে। এই সংকট অর্থনৈতিক পতন ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

  • জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু সংকট ও অত্যধিক পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে নিচে নেমে গেছে।
  • শহরের প্রায় অর্ধেক গভীর নলকূপ শুকিয়ে গেছে।
  • মার্সি কর্পসের তথ্য মতে, কাবুল প্রতি বছর প্রাকৃতিকভাবে পুনর্ভরনযোগ্য পরিমাণের চেয়ে ৪৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার বেশি পানি উত্তোলন করছে।

নাগরিকদের দুঃসহ জীবন

রাহিলার পরিবারের মতো অনেকেই প্রতিটি ফোঁটা পানির জন্য অর্থ খরচ করে এবং তা সযত্নে ব্যবহার করে। তিনি বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বৃষ্টি বেশি হলে ভালো হয়, কিন্তু যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচব জানি না।’

২৮ বছর বয়সী আহমদ ইয়াসিনের পরিবার তাদের পিছনের বাগানে ১২০ মিটার গভীর একটি কূপ খনন করেছে। কিন্তু এই পানি পানযোগ্য নয়।

 ইয়াসিন বলেন, ‘এটা নিরাপদ নয়। আমরা পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করি। এছাড়া কিছু করার নেই।’

স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব

  • কাবুলের ৮০% ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত (পিট ল্যাট্রিন ও শিল্পবর্জ্যের কারণে)।
  • ডায়রিয়া ও বমি শহরের সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পানির জন্য হাহাকার: কাবুলের আজারা এলাকায় পানি সংগ্রহ করছেন একজন প্রবীণ আফগানি। ছবি: সিএনএন নিউজ।

সরকারি কর্মচারী সৈয়দ হামিদ (৩৬) বলেন, ‘রেস্তোরাঁ বা কূপের পানি দিয়ে দাঁত মাজলেও আমরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ি।’

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

পানি বিশেষজ্ঞ নাজিবুল্লাহ সাদিদ বলেন, ‘কাবুলে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে, কিন্তু তুষারপাত কমে গেছে। এটি ফ্ল্যাশ ফ্লাড বাড়াচ্ছে এবং ভূগর্ভস্থ পানির রিচার্জ কমিয়ে দিচ্ছে।’

পানির ট্যাঙ্কারে বসে থাকা আফগান শিশু: কাবুলের তীব্র পানিসংকটের নির্মম চিত্র। সূত্র: সিএনএন নিউজ।

ইউনিসেফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে কাবুলের ভূগর্ভস্থ পানি সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যেতে পারে।

সূত্র: সিএনএন নিউজ।

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply