Site icon Jamuna Television

ভ্যান চালিয়ে টাকা বাঁচিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা!

আহমেদ নাসিম আনসারী, ঝিনাইদহ

কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের কুশনা, জালালপুর, তালসার সহ একাধিক রাস্তায় চলার সময় প্রায়ই চোখে পড়ে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ডগুলো। “কোথাও লেখা আছে সামনে স্কুল, গতি কমান” “আবার কোথাও লেখা আছে সামনে বাজার, আস্তে চলুন”। “কোথাও লেখা আছে আপনার শিশুকে স্কুলে পাঠান, বাল্যবিবাহ বন্ধ করুন। “নিরাপদ সড়ক গড়তে সকলেই সচেতন হই”।

আর এই সাইনবোর্ডগুলো দিয়ে যিনি এলাকার মানুষকে সচেতন করে চলেছেন তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। আকিমুল ইসলাম ওরফে সাজু (৩০) নামের এই ভ্যান চালক দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে শুধু বেঁচে আছেন তাই নয়, নিরবে সমাজের কাজ করে চলেছেন। অন্যরা গাছের সঙ্গে পেরেক ঠুকে নিজেদের প্রচারে যখন ব্যস্ত, সাজু তখন গাছের কথা চিন্তা করে বাঁশের খুটি ব্যবহার করছেন।

সমাজ সচেতন এই যুবক আকিমুল ইসলাম ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার তালসার গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ ভুইয়ার পুত্র।

আকিমুল জানান, দরিদ্রতার কারণে ছোট বেলায় তার পড়ালেখা হয়নি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে অন্যের দোকানের কর্মচারীর কাজে দেওয়া হয়। একসময় কর্মচারীর কাজ ছেড়ে দিয়ে ভ্যান চালানো শুরু করেন। ১২ বছর তিনি এই ভ্যান চালাচ্ছেন। বর্তমানে বাবা-মা আর স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তার সংসার। এই আয়ের পাশাপাশি বাবা ওয়াদুদ ভুইয়ার একটি চায়ের দোকান আছে।

আকিমুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে চোখের সামনে এক শিশু রাস্তা পাড় হতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এই দেখে তার মনের মধ্যে প্রচণ্ড কষ্ট হয়। এটা বুঝতে পারেন যে সচেতনতা না থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তখন থেকে রাস্তার ধারে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড লাগানো শুরু করেন।

আকিমুল আরও জানান, পোস্টার গুলো প্রেস থেকে ছাপিয়ে এনে নিজেই রাস্তার ধারে টানিয়ে দেন। ভ্যান চালিয়ে যা আয় করেন তার মধ্যে থেকে কিছু পয়সা বাঁচিয়ে এটা করেন তিনি। এ কাজে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও জানান।

আকিমুল ইসলামের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ ভুইয়া জানান, তারা দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে চলেন। ছেলে ভ্যান চালিয়ে অর্থ আয় করে। তারপরও সে সমাজকে ভালো রাখতে সমাজের মানুষকে সচেতন করতে নানা কাজ করে। এটা তার কাছে ভালোই লাগে। তবে অনেক সময় সংসারের কষ্টের কথা মনে হলে খারাপ লাগে।

এ বিষয়ে কুশনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান জানান, ছেলেটি পেশায় একজন ভ্যান চালক। কিন্তু তার মনটা অনেক বড়। সে নিরবে সমাজের কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আকিমুলের মতো সমাজের অন্যরাও সেবামূলক কাজে এগিয়ে এলে একদিন আমাদের এই সমাজ উন্নত সমাজে পরিনত হবে।

Exit mobile version