Site icon Jamuna Television

সড়ক দখল করে বালুমহাল

তুরাগ নদের তীর ও আশপাশের সড়ক দখল করে বালুর ব্যবসা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে অনেক অবৈধ স্থাপনা। উচ্ছেদ করা হলেও কিছুদিন পর আবার এসব স্থাপনা করা হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে নদীর তীর রক্ষা করা যাবে না। এ জন্য সবাইকে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

অপরদিকে ঢাকা-সাভার, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও মিরপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কগুলো এখন বালু ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। তবে তুরাগ থানা পুলিশ বলছে, অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তুরাগের ধউর ও মিরপুর বেড়িবাঁধের চটবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তুরাগ নদ ও সড়কের অধিকাংশ জায়গা দখল করে বালু ব্যবসা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বালুর গাড়ি লোড-আনলোড করার সময় ঢাকা-সাভার, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও মিরপুর-আব্দুল্লাহপুর সড়কগুলো যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও বালু উঠা-নামার জন্য রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই এসব সড়ক ধুলায় আচ্ছন্ন থাকে।

মিরপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর আসা যাত্রী মো. সেলিম খান বলেন, মিরপুর শাহ আলী মাজার থেকে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কে শতাধিক বালুর গদি রয়েছে।

এ রাস্তা দিয়ে আমি প্রায়ই আসা-যাওয়া করি। এক সময় এয়ারপোর্ট হয়ে মিরপুর যাওয়া হতো। দুই বছর ধরে যানজটের কারণে এ রাস্তাটি ব্যবহার করছি।

বর্তমানে বালু ব্যবসীদের জন্য অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। এ ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে আমার সময় লাগে এক ঘণ্টার মতো।

তুরাগের ধউর এলাকার বাসিন্দা মো. কামাল শেখ জানান, মিরপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত তুরাগ নদ ও সড়ক দখল করে বালুর ব্যবসা করছে রাজনৈতিক নেতারা।

তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠছে খাবারের হোটেল। এগুলোও মূল সড়ক থেকে নদের দিকে এগিয়ে করা হয়েছে। এসব জায়গা আগে জলাশয় ছিল। কিছুদিন আগে বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযান চালায়। কিন্তু আবার স্থাপনা করা হয়েছে।

ধউর এলাকায় বেড়িবাঁধের সিন্নিরটেক থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে তুরাগের পাড়ে কয়েকশ’ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দিয়াবাড়ী এলাকায় তুরাগের পাড় ঘেঁষে রাখা হয়েছে বালু।

নদীতে ভেড়ানো কার্গো থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বালু এনে পাড়ে ফেলা হচ্ছে। সেই বালু এক্সকেভেটর দিয়ে কেটে ট্রাকে তুলে বিভিন্ন জায়গায় নেয়া হচ্ছে।

স্থানীয়রা আরও জানায়, যেসব স্থানে বালু ফেলা হচ্ছে সেগুলো ছিল নিচু জলাশয়। কিছু স্থানের জমি নদীর। এভাবে বালু ব্যবসার কারণেও নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে, এসব অবৈধ দখলদারদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় নেতারা।

দিয়াবাড়ী এলাকার বালু ব্যবসায়ী পিয়ার মিয়া বলেন, বালু উত্তোলনের কারণে নদীর ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু আমরা কি করব? এ ব্যবসার ওপর পরিবার চলে। বিকল্প কোনো উপায় নেই। তার মতো অনেকেই বালুর ব্যবসা করে ক্ষতি করছেন নদীর।

কামারপাড়া ব্রিজসংলগ্ন বালুর দোকানদার মদিনা এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা কুশুম জানান, আমরা নিজের জমিতে ব্যবসা করছি। প্রতিদিন বালু লোড-আনলোডের পর সড়ক পানি দিয়ে ধুয়ে দেয়া হয়।

এদিকে মিরপুর-বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট, কামারপাড়া, ধউর, কাঁঠালদিয়া, প্রত্যাশা ব্রিজ এলাকার সরকারি জায়গা দখল করে বালু মহাল বানিয়ে মাসের পর মাস ব্যবসা করছে একটি সিন্ডিকেট।

ওই সিন্ডিকেটের মধ্যে কামারপাড়া গোদাড়াঘাট, কাঁঠালদিয়া, পরানমণ্ডলের টেক, আইইউবিটির পাশে শহিদের গদি (বালু মহাল), ইজতেমা ব্রিজসংলগ্ন হাজীর গদি, কামার পাড়া বটতলা রনির গদি, মাদ্রাসাসংলগ্ন সায়েব আলীর গদি ও আলম চাঁনের গদি, প্রত্যাশা ব্রিজসংলগ্ন শহিদুল ইসলাম শহিদের গদি ও দৌড় পুলিশ বক্সসংলগ্ন নূর মোহাম্মদের গদিসহ আরও বেশ কিছু বালু মহাল রয়েছে।

এতে সরকারি শত শত বিঘা জমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি ওই সব জায়গায় ঘর তৈরি করে ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে টাকা তোলা হচ্ছে।

তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নুরুল মোত্তাকিন বলেন, যারা অবৈধভাবে এসব ব্যবসা করছে তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযান প্রায়ই চালানো হয়।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম-পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, যে কোনো মূল্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী দখলমুক্ত করা হবে। কোর্টের নির্দেশনা মেনেই উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে।

তাছাড়া সম্প্রতি তুরাগ নদের দু’পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠা সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। যদি তুরাগ নদ আবার দখল করা হয়, প্রয়োজনে পর্যাক্রমে অভিযান চালানো হবে।

-মো. পলাশ প্রধান

Exit mobile version