Site icon Jamuna Television

বুলবুল থেকে বিপ্লব

বছর পনের আগের কথা। আব্দুল কুদ্দুসের কথা। তিনি একজন টেম্পু চালক। সারাদিনের খাঁটুনির পর যা উপার্জন করেন তা দিয়ে ৫ ছেলেমেয়ের সংসারের খরচ মেটানো দায়। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, কিন্তু স্বপ্নটা যে তার অনেক বড়! প্রচণ্ড ভালোবাসা ক্রিকেটের প্রতি। বিশেষ করে বাংলাদেশ দলের সব খবর তার রাখা চায়-ই। সুযোগ পেলেই মাঠে গিয়ে দেখেন বাংলাদেশের খেলা। তার পছন্দের খেলোয়াড় আমিনুল ইসলাম বুলবুল। মনের গহীনের ছক কষতে থাকেন আব্দুল কুদ্দুস। ছোট ছেলেটার নাম রেখে দেন- আমিনুল ইসলাম বুলবুল!

বাবার ইচ্ছায় সাড়ে ছয় বছর বয়সে ক্রিকেটে হাতেখড়ি বুলবুলের। বছর তিনেকের মধ্যেই খেলোয়াড় গড়ার কারিগর, কোচ ওয়াহিদুল গণির হাতে পড়েন। পাকা জহুরি ওয়াহিদুল গণির মন বলছিলো, এই ছেলে এক দিন ব্যাটে-বিপ্লব ঘটাবে। সেজন্যই কিনা বুলবুল থেকে বদলে তার নাম রেখে দিলেন বিপ্লব!

সেই বিপ্লব এরপর ভর্তি হলেন বিকেএসপিতে। সেখান থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপও খেলে ফেললেন। বোলার হিসেবে মাঝে মাঝেই ঝলক দেখিয়েছেন। তবে, তখনও তার মূল পরিচয় একজন ব্যাটসম্যান।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে নাজেহাল হওয়ার পর, ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুটাও ভালো হয়নি টাইগারদের। দলে একজন লেগ স্পিনারের অভাব তীব্রভাবে বোধ করছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট। হঠাৎই দলে ডাক পেলো আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, তাও আবার লেগ স্পিনার হিসেবে! তাকে খেলানো হবে নাকি অন্য অনেকের মতোই বসিয়ে রেখেই দল থেকে বাদ দেয়া হবে এই আলোচনার মধ্যেই অভিষেক হয়ে গেলো বিপ্লবের। ব্যাট হাতে ৯ নম্বরে নেমে কোনো বল খেলার সুযোগ না পেলেও বল হাতে ঠিকই রাঙিয়ে রাখলেন অভিষেকটা।

ম্যাচের ৭ম ওভারে তার হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আস্থার প্রতিদান দিতে সময় নিয়েছেন মাত্র ৩ বল! অভিষেকের তৃতীয় বলেই তুলে নেন উইকেট। একটানা ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ২টি উইকেট। স্বপ্নময় অভিষেকই বলতে হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপরই পড়লেন ইনজুরিতে।

মা-বাবার সাথে বিপ্লব

ছেলের খেলার খরচ যোগাতে গৃহিণী মা মাহমুদা বেগম এনজিওর সহায়তায় কুটির শিল্পের কাজ শুরু করেন। টেম্পু চালক বাবা আব্দুল কুদ্দুস টেম্পু ছেড়ে সিএনজি চালাচ্ছেন, সেও ১৪ বছর হলো। সেই ঘামে-শ্রমেই সেদিনের বুলবুলের আজকের বিপ্লব হয়ে ওঠা। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক!

Exit mobile version