Site icon Jamuna Television

সৌদি সীমান্তে হুতিরা আসলে কী ঘটিয়েছে?

গত ২ দিন ধরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা দাবি করছে, তারা সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলের নাজরান প্রদেশের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়ে অন্তত ৫০০ সৌদি সেনাকে হত্যা করেছে। তাদের বক্তব্য, ‘৩ সৌদি ব্রিগেডকে’ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও দাবি করা হয়েছে, ‘কয়েক হাজার’ জনকে বন্দী করেছে হুতিরা। গত আগস্ট মাসের ২৫ তারিখে হামলাটি চালানো হয় বলে হুতি সূত্র থেকে জানানো হলেও এ সংক্রান্ত তথ্য প্রথম প্রকাশ করা হয় গত শনিবার।

সৌদির বিপক্ষে যায় এসব দাবি রয়টার্স, আল জাজিরা, এএফপি, বিবিসি, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস সহ নামকরা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে শুধুমাত্র ‘হুতিদের বরাতে’। প্রায় সব সংবাদমাধ্যম খবর পরিবেশনের সময় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, তারা নিজেদের সূত্রের দ্বারা হুতিদের ওইসব ‘দাবি’ যাচাই করে দেখতে সক্ষম হয়নি।

এরই মধ্যে গতকাল রোববার হুতিরা বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে তাদের অনুগত বেশ কিছু টুইটার একাউন্ট ও নিজেদের পরিচালিত আল-মাসিরাহ টিভির মাধ্যমে।

নামকরা সব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এসব ছবি ও ফুটেজ প্রকাশ করেছে, এবং এক্ষেত্রেও বলেছে, এগুলো ‘নিজেদের সূত্রে যাচাই করা সম্ভব হয়নি’।

প্রকাশিত ফুটেজ বিষয়ে বিবিসি গতকাল রোববার “Houthi rebels video fails to prove Saudi troop capture claim” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে হুতি মুখপাত্র যেভাবে ‘সৌদি সেনাদের ওপর হামলা ও বিজয়ের’ দাবি করেছেন তার সাথে ফুটেজে দেখা যাওয়া বন্দী লোকজনের গায়ে সৌদি সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম না থাকার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কবে কিভাবে হামলা চালানো হয়েছে, তা বিস্তারিত প্রকাশে ‘নিরাপত্তা’র কারণ দেখিয়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হুতি মূখপাত্র।

প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যাওয়া বন্দী লোকজনের সংখ্যা হুতি মুখপাত্র বর্ণিত ‘কয়েক হাজার’ এর পরিবর্তে বাস্তবে ‘কয়েকশ’ বলে মনে হয়েছে।

এদিকে সর্বশেষ আজ সোমবার হুতিদের আল মাসিরা টিভির বরাতে রয়টার্স ও আল জাজিরা জানিয়েছে, হুতি কর্তৃপক্ষ ৩৫০ জন বন্দীকে আজ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মুক্তি দেবে। এদের মধ্যে ৩ জন সৌদি নাগরিকও রয়েছেন।

অবশ্য এটা স্পষ্ট করে বলা হয়নি যে, এই মুক্তি পেতে যাওয়া বন্দী ব্যক্তিরা কি নাজরান হামলায় আটক ‘কয়েক হাজার জনের’ মধ্যে ৩৫০ জন, নাকি ভিন্ন কোনো ঘটনায় বন্দী হয়েছিলেন তারা। আবার ৩ সৌদি নাগরিক সিভিলিয়ান, নাকি সৌদি সেনা- তাও স্পষ্ট করা হয়নি। আবার ৩৫০ ছাড়া বাকি বন্দী ‘কয়েক হাজার’ এর ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, ছাড়া হবে কিনা, বা কবে কিভাবে ছাড়া হবে- সে বিষয়গুলোও আল-মাসিরাহর বরাতে জানা যায়নি।

তবে যেহেতু হুতিরা জাতিসংঘের মধ্যস্থতা চেয়েছেন, ফলে অন্তত এই ৩৫০ জন বন্দীর বিনিময়ের বিষয়টি স্বাধীন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যাচাইযোগ্য। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর পরবর্তী প্রতিবেদনের ওপরই আমাদের নির্ভর করতে হবে।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, প্রকাশিত ফুটেজ ও ছবিগুলো ভিন্ন ঘটনার বা এডিট করা এ ধরনের কোনো প্রশ্ন এখনও কোনো সংবাদমাধ্যম তুলেনি। বিবিসি প্রকাশিত ফুটজেগুলোর সাথে হুতি মুখপাত্রের করা দাবির গরমিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

গত দুইদিনে সৌদি আরব অবশ্য এসব দাবি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি। সাধারণত, প্রতিপক্ষের এ ধরনের দাবি সাথে সাথেই অস্বীকার করা হয়ে থাকে।

সার্বিকভাবে বললে, সম্প্রতি কোনো এক সময়ে হুতিদের দ্বারা সৌদি জোটের ওপর বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে তা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে সেই হামলা সৌদি আরবের ভূখণ্ডে ঢুকে কিনা, কিম্বা সেই হামলা সৌদি সেনাবাহিনীর ওপর নাকি সৌদি অনুগত ইয়েমেনি মিলিশিয়াদের ওপর, সৌদি সেনাবাহিনীর ওপর হলে তাতে আদৌ সৌদি সেনারা হতাহত হয়েছে কিনা, হলে তাদের সংখ্যা যেভাবে বড় করে (৫০০) বলে দাবি করা হচ্ছে তা সঠিক কিনা, বন্দীদের মধ্যে ‘২০০০’ সৌদি সেনা (ট্রুপস) আছে কিনা– এসব তথ্য এখনও যাচাইসাপেক্ষ।

Exit mobile version