Site icon Jamuna Television

গাজীপুরে ১২ ঘণ্টাই হলুদ হয়ে যায় কাঁচা কলা

মো. পলাশ প্রধান, গাজীপুর
গাজীপুরের সবকটি বাজারে কলা পাকাতে প্রকাশ্যেই দেয়া হচ্ছে কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ। ফলে কলার বাহ্যিক রং ১২ ঘণ্টার মধ্যেই হলুদ ও আকর্ষণীয় আকার ধারন করে। বিষাক্ত যেসব কেমিক্যাল মিশানো হচ্ছে তা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রাজধানীর উত্তরায় ও শিল্পনগরীতে কলার প্রচুর চাহিদার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এবং প্রশাসনের নজরদারির অভাবে অসাধু কলা ব্যবসায়ীরা এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, টঙ্গী বাজার, বৌ-বাজার, টঙ্গী নতুন বাজার, চেরাগআলী বাজার, বড়বাড়ি বাজার, বোর্ডবাজার, পুবাইল বাজার, কালিগন্জ বাজার, কালিয়াকৈর বাজার, গাজীপুর চৌরাস্থা কাচা বাজার, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া সহ গাজীপুরের প্রায় সব বাজারে প্রতিদিন ৫/৬ ট্রাক কলা ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসে। গাজীপুরের বাজারগুলো ছাড়াও এলাকা ভিক্তিক কলার দোকান রয়েছে শতাধিক। এসব কলার দোকানে প্রতিদিন কলা পাকানো এবং কলার রং আকর্ষণীয় করার জন্য কার্বাইড বা কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ মেশানো হচ্ছে। এসব বাজারে যেসব কলা বিক্রি করা হচ্ছে তার শতভাগ কলাই বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। খুব তাড়াতাড়ি যাতে এসব কলা পেকে যায় তাই ব্যবসায়ীরা এই কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকে। এমন দৃশ্য চোখে পরবে টঙ্গী বাজার, টঙ্গী নতুন বাজার, চেরাগ আলি বাজার, বোর্ড বাজার সহ ছোট বড় সব কয়টি বাজারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টঙ্গীর নতুন বাজারের এক কলা ব্যবসায়ী জানান, কলায় এসব পদার্থ মেশালে কলা দ্রুত পাকে এবং কলা দেখতে খুব সুন্দর দেখায়, তাই কাস্টমাররা এসব কলা কিনে নিয়ে যায়। এতে আমাদেরও লাভ হয় বেশি। কৃত্রিমভাবে পাকানো কলা খুব দ্রুত পচেও যায়। এসব পদার্থ মেশানো কলা খেলে যে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই কলা ব্যবসায়ী বলেন, সবাই মেশায় তাই আমিও মেশাই।

এ ব্যবসায়ে গত দুই মাস যাবৎ এসেছেন মো. আব্দুল রহিম। তিনি টঙ্গীর নতুন বাজারে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করছেন কলা ব্যবসা। কেমিক্যাল মেশানোর প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ী আব্দুল রহিম জানান, কলা আমরা অনেক দূর থেকে নিয়ে আসি। আসতে আসতে তিনদিন লেগে যায়। আনার পর একটি বদ্ধ ঘরে রেখে রাসায়নিক ছিটানো হয়। ছিটানোর ফলে এই কলা জলদি পেকে যায়। আমাদের বিক্রি করতেও সুবিধা হয়। তাই তারা একসঙ্গে কলা পাকাতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করেন।

টঙ্গীর চেরাগ আলির আরেক ব্যবসায়ী মো. হারুন মিয়ার সাথে কথা হয়। তিনি ব্যবসা করছেন বহু বছর যাবৎ। এ পর্যন্ত তেমন কোন সমস্যা বা অভিযোগ আসেনি। তাই চোখ বন্ধ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন কেমিক্যাল মেশানোর প্রক্রিয়া ছাড়া কেউ এ ব্যবসা চালাতে পারবে না।

বোর্ড বাজারে বাজার করতে আসে টঙ্গীর মো. খোরশেদ আলম। কেমিক্যাল মিশিয়ে কলা পাকানোর বিষয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, যারা খাদ্যদ্রব্যে এসব কেমিক্যাল মিশায় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ধরণের ব্যবস্থা নিচ্ছে না, যার ফলে দিনদিন এসব বেড়েই চলেছে।

এ বিষয়টি নিয়ে কথা হয় টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ২৫০ সরকারি হাসপাতলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. পারভেজ আহম্মেদ এর সাথে। তিনি বলেন, বিষাক্ত এসব দাহ্য পদার্থ মিশানো কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং সাথে সাথে বমিভাব ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেমিক্যাল মিশ্রিত কোন খাদ্য গ্রহণ করলে তার প্রভাব পড়ে লিভার ও কিডনীর উপর।

এব্যাপারে র‌্যাব-১ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আগের তুলনায় বর্তমানের কলায় কেমিক্যাল দেওয়ার প্রবনতা কমে আসছে। তবে, কলার মধ্যে যদি রাসায়নিক কেমিক্যাল মিশিয়ে কলা পাকানো হয় তাহলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি এইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

Exit mobile version