Site icon Jamuna Television

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই বীর মুক্তিযোদ্ধার দাফন ! সর্বস্তরে ক্ষোভ

দিনাজপুর প্রতিনিধি :

এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি ছেলেকে চাকরীচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে। তাই মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা হিসেবে তাদের সালাম/ স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে চাননি মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন। মৃত্যুর ২ দিন আগে মুক্তিযোদ্ধার লিখে যাওয়া এমন চিঠির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রতিনিধিরা।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬ নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের যোগীবাড়ী গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির বরাবরে এমন একটি চিঠি লিখে যান। যেখানে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির সুপারিশে ছেলে নুর ইসলামের নো ওয়ার্ক নো পে ভিত্তিতে এসিল্যান্ডের গাড়ী চালক হিসাবে চাকুরি হয় গত ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে এসিল্যান্ড তাকে বিভিন্ন অজুহাতে চাকরীচ্যুত করেন। পরে বিষয়টি হুইপ ইকবালুর রহিমকে জানালে তিনি বিষয়টি এডিসিকে দেখতে বলেন। কিন্তু এরপরেও চাকুরী ফেরত না পাওয়ায় জেলা প্রশাসককে জানাতে গেলে জেলা প্রশাসক তার উপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি আরও লিখেছেন, জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে করা স্বাধীন দেশে আমার ছেলের রুজি রোজগারটুকুও অন্যায় ভাবে কেড়ে নেয়া হল। গত ২১ অক্টোবর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দিনাজপুরের কার্ডিওলজি বিভাগে, ওয়ার্ড নং -২,বেড নং -৪৪ এ ভর্তি অবস্থায় আছি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা হয়। কারণ এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি যারা আমার ছেলেকে চাকরীচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম/ স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে আমি চাইনা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২২ অক্টোবর চিঠিটিতে তিনি স্বাক্ষর করে ডাক যোগে ঢাকায় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির বরাবরে প্রেরণ করেন। পরের দিন ২৩ অক্টোবর সকাল ১১ টার সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের শেষ বিদায়ের সময় সেখানে বিউগলে বাজেনি বিদায়ের সুর। জানাজার পূর্ব মুহূর্তে ম্যাজিস্ট্রেট মহসীন উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ প্রশাসনের চৌকস দল গার্ড অব অনার জানাতে গেলে বাধা দেয় পরিবার ও এলাকাবাসী। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের মরদেহ জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত করা হয়নি।
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছে নিহতের স্ত্রী-ছেলে ও এলাকাবাসী।

দু:খ ও কষ্ট ও ক্ষোভ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন। প্রতিবাদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নেয়া হয়নি। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে জনপ্রতিনিধিরাও।
তবে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজী হননি। তবে মোবাইলে তিনি জানিয়েছে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

নিহত মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের মুক্তিবার্তা নং ০৩০৮০১১০০২, ভাতা বই নং -৮১৯।

Exit mobile version