Site icon Jamuna Television

মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রীকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দিলেন মেয়র নাছির

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভার মঞ্চ থেকে প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনসহ তিনজনকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশে তিন নেতাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

হাসিনা মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রীর ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মা। এছাড়া, নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আহমেদুর রহমান সিদ্দিকীকেও মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়।

রোববার (২৭ অক্টোবর) সকালে নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৬টি জেলার সাংগঠনিক প্রতিনিধি সম্মেলনে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে ঘটনার সময় তিনি অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছাননি।

এ ঘটনায় চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সভা চলাকালীন সময়েই নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একাধিক নেতা মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে গিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে ১১টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন। মঞ্চ থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী তাকে হাতের ইশারায় মঞ্চে ডাকেন। তখন নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর তাকে মঞ্চে পৌঁছে দেন। হাসিনা মহিউদ্দিন অতিথিরদের দ্বিতীয় সারিতে বসেন। এরপর সভার সঞ্চালক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বারবার নির্দিষ্ট পদধারী নেতাদের বাইরে যারা মঞ্চে আছেন তাদের নেমে যাওয়ার নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে মঞ্চে থাকা আয়োজকদের কয়েকজন তাকে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেন। তখন তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান। মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী নেতাকর্মীরা দর্শকসারির সামনে তার জন্য চেয়ার এনে দিলে সেখানে বসেন।

এর আগে আবদুচ ছালাম এবং আহমেদুর রহমান সিদ্দিকীকে মেয়র নামিয়ে দিলে তারাও দর্শক সারিতে গিয়ে বসেন। পরবর্তীতে দুজনই অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যান বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী জানান, এই ঘটনাটি এড়ানো যেতো। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার জায়গা থেকে এটি ঘটে থাকতে পারে। আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী একাধিকবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর বন্ধু ছিলেন। অন্যদিকে, সিডিএর’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামও মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান এমন গুঞ্জন আছে। সে জন্য হয়তো মেয়র তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে থাকতে পারেন।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী নেতাকর্মীরা, বলছেন প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যে ভূমিকা রেখেছিলেন সেটি অনস্বীকার্য। তার স্ত্রীকে এভাবে অসম্মান করাটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যদিকে, মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারীদের কথা, দলীয় সভায় যাদের মঞ্চে বসার কথা ছিল তারাই যেন বসেন সেটিই নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন মেয়র। বিনীতভাবেই তিনি কাজটি করেছেন।

উল্লেখ্য, হাসিনা মহিউদ্দিনের স্বামী মহিউদ্দিন চৌধুরী ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মারা যান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে টানা ১৭ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম শহরে যারা আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেছেন তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরী অন্যতম। এজন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব তাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন। তার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

Exit mobile version