Site icon Jamuna Television

অবহেলিত হয়ে আছে লালন শাহ’র নামে প্রতিষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়

আহমেদ নাসিম আনসারী, ঝিনাইদহ:

“খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, কেমনে আসে যায়” “সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে” এ জাতীয় অসংখ্য গানের স্রষ্টা মরমী কবি লালন শাহ এর জন্মস্থান ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর। এখানে তারই নামে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আজও চরম অবহেলিত।

৯০ দশকে চার কক্ষের একটি ভবন নির্মাণ হলেও আজ সেটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাচ্চারা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছে না। মাঝে মধ্যেই তাদের মাথার উপর ছাদ থেকে পলেস্তারা খুলে পড়ছে। এলাকার মানুষ বিদ্যালয়টিতে নতুন ভবনের দাবি করলেও দীর্ঘদিনেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের উত্তর প্রান্তে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার নাম লালন শাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এই নামে প্রতিষ্ঠার কারণ জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রহিম জানান, এটা লালনের গ্রাম। এই গ্রামেরই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। যে কারণে তার নামে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। তার নামে এই গ্রামে আরও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার বেশির ভাগই অবহেলিত।

প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম জানান, ১৯৮৭ সালে এলাকার বাচ্চাদের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে কিছু শিক্ষানুরাগী লালনের গ্রাম হরিশপুরে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে চাটাই দিয়ে ঘেরা একটি কক্ষে ক্লাস শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে চার কক্ষের একটি একতলা ভবন নির্মাণ করে দেন সরকার। যার একটি ছোট আর বাকি তিনটি তুলনামূলক বড় কক্ষ। ছোট কক্ষে অফিসের কাজ চলে, বাকি তিনটিতে ক্লাস নেওয়া হয়।

আব্দুর রহিম জানান, ২০১৩ সালে তাদের বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে রেজিস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল।

প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম জানান, ৬৪ শতক জমির উপর তাদের বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ৪ জন। একজনের পদ শূন্য রয়েছে।

তিনি জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩২ জন। দুই শিফটে এদের পাঠদান করানো হয়। প্রথম শিফটে শিশু, ওয়ান ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্লাস নেওয়া হয়। আর দ্বিতীয় শিফটে তৃতীয়, চতুর্থ ও প ম শ্রেণীর ক্লাস চলে এই জরাজীর্ণ ভবনে।

তিনি আরও জানান, ভবনটি অনেক পুরানো হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রায়ই ছাদ থেকে পলেস্তারা খুলে পড়ছে। ছাদ দিয়ে পানিও পড়তো। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ছাদের উপর জলছাদ করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, লালন শাহ্ এর নামের প্রতিষ্ঠান এতোটা অবহেলিত থাকবে এটা কেউ আশা করেন না।

এ ব্যাপারে হরিশপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়টি বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাচ্চারা সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থেকে পড়ালেখা করছে।

তিনি বলেন, লালন শাহ্ এর নামের প্রতিষ্ঠান এভাবে ঝূকিপূর্ণ থাকবে এটা লালনের গ্রামের মানুষ হিসেবে তারা আশা করেন না। রেজাউল ইসলাম দ্রুত এই প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ হবে এটা আশা করেন।

এ বিষয়ে হরিনাকুন্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম আব্দুর রহমান জানান, এ বিষয়টি তারা অবগত আছেন। তিনি বলেন এই বিদ্যালয়টি নতুন ভবন করার জন্য তাদের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছেন দ্রুত কাজ শুরু করতে পারবেন।

Exit mobile version