Site icon Jamuna Television

ক্লিনিক বর্জ্যে দূষিত কুমার নদী

আহমেদ নাসিম আনসারী, ঝিনাইদহঃ

প্রতিদিন রাতে শৈলকুপা শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে কুমার নদীতে।

অপারেশনসহ অন্যান্য চিকিৎসার পর মানুষের দেহ থেকে অপসারিত সংক্রমিত অংশ নদীতে ফেলার পর প্রথমে মাছের পেটে ও পরে মাছ থেকে মানুষের দেহে সংক্রমণসহ ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে নদী পারের মানুষসহ উপজেলাবাসী।

তবে ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয় পৌরসভার থেকে কোন ব্যবস্থা না করায় তাদের এ অবস্থা। তারা পৌরসভার সমস্ত শর্ত পুরণ করেই ব্যবসা করছেন কিন্তু কোন সুযোগ পাচ্ছেন না।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য নির্দ্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য কালো, হলুদ ও লাল রঙের তিনটি পৃথক পৃথক ডাস্টবিন পৌরসভার পক্ষ থেকে থাকার কথা। কালো ডাস্টবিনে সাধারণ বর্জ্য, হলুদ ডাস্টবিনে সার্ফ কাটিং ব্লেডসূচ ও লাল ডাস্টবিনে সংক্রমিত রোগের বর্জ্য ফেলার কথা।

ক্লিনিক মালিকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, বেশ কিছু দিন আগে পৌর মেয়র, তাদের সাথে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বর্জ্য ফেলার একটি জায়গার জন্য বলেন। জায়গা পাওয়া যায় কিন্তু পৌরসভার পক্ষ থেকে পরে আর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নদীপারের জেলে ও সচেতন মহলের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্লিনিকের বর্জ্য নদীতে ফেলার ব্যাপারে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করা হলেও কোনব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

নদীপারের বাসিন্দা লক্ষি কান্ত গড়াই বলেন, নদীতে গোসল বা অন্যান্য কাজ করার সময় এখন ঝুকির মধ্যে থাকেন তারা। গোসল করতে গেলে দেখা যাচ্ছে সামনে দিয়ে ক্লিনিক হাসপাতালের বর্জ্য ভেসে যাচ্ছে। এছাড়া অনেকের পায়ে সুচ বিদ্ধ হচ্ছে। স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে নদী পারের মানুষ।

নুরজাহান (প্রা:) হাসপাতাল এন্ড নিউ পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক কাউন্সিলর শওকত হোসেন জানান, ক্লিনিকে বর্জ্য ফেলার জন্য হাবিবপুর গোহাটের কাছে ডাস্টবিন নির্মাণের কথা ছিল কিন্তু কি কারণে তা আর নির্মাণ হয়নি তা তিনি জানেন না।

শামীম প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক শাহীন আক্তার জানান, উপজেলা শহরে বর্তমানে একটি সরকারী ও ৫টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও বেশকিছ ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে।

খন্দকার প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের মালিক ফজলুর রহমান বলেন, তারা পৌরসভার সমস্ত শর্ত মেনে ক্লিনিক ব্যবসা করছেন। কিন্তু বর্জ্য ফেলার জন্য পৌরসভা থেকে ডাস্টবিনের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রাশেদ আল মামুন জানান, অন্যান্য বর্জ্য থেকে ক্লিনিকের বর্জ খুবই ঝুকিপূর্ণ। নির্দ্দিষ্ট স্থান ছাড়া এ বর্জ্য ফেলার কোন নিয়ম নেই। নাগরিক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান পৌরসভা থেকে ক্লিনিকের বর্জ্য ফেলার জন্য আলাদা ডাস্টবিন থাকার কথা রয়েছে। সেখান থেকে পৌরসভার পরিছন্নকর্মীরা তা নিয়ে যাবে। পৌরসভায় এ ধরনের কোন ব্যবস্থা আছে কিনা তার জানা নেই।

তিনি আরো বলেন, সরকারী হাসপাতাল থেকে বছরে ৬ লক্ষাধিক টাকা পৌরসভায় কর দেওয়া হয়। অথচ তাদের কোন পরিছন্নতা কর্মী মাসে দুই একবার হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে বর্জ্য নিতে আসে কিনা তা সন্দেহ।

নদীতে ক্লিনিকের বর্জ্য ফেলার ব্যপারে শৈলকুপা পৌর মেয়র কাজী আশরাফুল আজম বলেন, ক্লিনিকের বর্জ্য কবিরপুর শ্মশান ঘাটের কাছে নির্দ্দিষ্ট স্থানে ফেলার কথা। তারা সেখানে না ফেলে হাতের কাছে কুমার নদে ও ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। তারা পৌরসভার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে তা ঠিকনা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি এখানে নতুন এসেছেন। ক্লিনিক ও হাসপাতালের বর্জ্য যদি নদীতে ফেলা হয় তিনি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

Exit mobile version