Site icon Jamuna Television

আহত বাবা-মাকে নিয়ে ঢাকার পথে অ্যাম্বুলেন্স, মর্গে পড়ে আছে ছোঁয়া মনির নিথর দেহ

তিন বছরের ছোঁয়া মনি। কয়েক ঘণ্টা আগেও ছিল মা আর বাবার কোলে। এই দুজনকে ছেড়ে এক মুহূর্তও তাকে রাখা যেত না কারো কাছে। মা কিম্বা বাবাকে সামনে না দেখলে জুড়ে দিতো কান্না। অথচ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এখন আর আব্বু-আম্মুর জন্য ছোঁয়া মনির কণ্ঠে কোনো আকুতি নেই! অ্যাম্বুলেন্সে করে ছোঁয়া মনির কাছ থেকে শত মাইল দূরে, আরও দূরে ঢাকার উন্নত কোনো হাসপাতালের দিকে এগোচ্ছেন আব্বু-আম্মু। আর ছোঁয়া মনির নিথর দেহ পড়ে আছে আরেক হাসপাতালে লাশঘরে।

ছোঁয়া মনির বাবার নাম সোহেল মিয়া, মা নাজমা বেগম। সোমবার ভোর রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগে মর্মান্তির ট্রেন দুর্ঘটনায় তারা উভয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত হয়েছিল তাদের কোলে থাকা শিশু সন্তান ছোঁয়া মনিও।

অন্যদের মতো তাদের তিনজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যান উদ্ধারকারীরা। এত বড় দুর্ঘটনার দকল এত ছোট শরীর বইতে পারেনি। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক জানান ছোঁয়া মনি আর বেঁচে নেই। অন্যদিকে সোহলে ও নাজমার অবস্থা বেশি গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে।

সোহলে ও নাজমাকে নিয়ে যখন ঢাকায় যাওয়া হচ্ছিল তখন ছোঁয়া মনির মামা জামাল মিয়া ভাগ্নির লাশ বুঝে নিতে হাসপাতালের মর্গ আর পুলিশের কাছে দৌড়াদৌড়ি করছেন।

ছোঁয়া মনির লাশটি ময়নাতদন্ত ছাড়া বাড়ি নিয়ে যেতে চান জামাল। তিনি আজ মঙ্গলবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।

তাতে লিখেছেন, “আপনার বরাবরে এই মর্মে আবেদন করিতেছি যে, আমার অধুনামৃত ভাগ্নি ছোঁয়া মনি, বয়স অনুমান ৩ বৎসর, পিতা: সোহেল মিয়া, মাতা: নাজমা বেগম, গ্রাম: বানিয়াচং, পোস্ট বানিয়াচং, থানা বাহিনয়াচং, জেলা: হবিগঞ্জ অদ্য ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোর অনুমান ৪ ঘটিকার সময় মন্দবাগ রেলস্টেশনে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হইলে আমার ভাগ্নি ছোঁয়া মনিকে উদ্ধার করিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার ভাগ্নি ছোঁয়া মনিকে মৃত বলিয়া ঘোষণা করেন। বর্তমান আমার অধুনামৃত ভাগ্নির লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে আছে। এ ব্যাপারে আমাদের পরিবারের পক্ষ হইতে আমার ভাগ্নির মৃত্যুর ব্যাপারে কোন অভিযোগ নাই বা কোনো প্রকার মামলা মোকদ্দমা করিব না বলিয়া আমিসহ আমার পরিবারের লোকজন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইতেছি।”

Exit mobile version