Site icon Jamuna Television

যুবলীগের কংগ্রেস আজ : ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারই মূল চ্যালেঞ্জ

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ৭ম জাতীয় কংগ্রেস আজ। এর মধ্য দিয়ে আসবে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব।

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, চাঁদা ও টেন্ডারবাজি, কমিটি বাণিজ্য, অনুপ্রবেশসহ নানা অপকর্মে হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করাই নতুন কমিটির মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা।

এদিন রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কংগ্রেসের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সংগঠনটির আগামী দিনের করণীয় কী হবে- সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। বিকাল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে কংগ্রেসের দ্বিতীয় পর্ব- কাউন্সিল অধিবেশন।

সেখানে গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাব উপস্থাপন ও অনুমোদন ছাড়াও নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সারা দেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা ও ৮টি জেলার মর্যাদাসম্পন্ন বৈদেশিক শাখার প্রায় ৩ হাজার কাউন্সিলর ও ২৫ হাজার ডেলিগেট এবং ৮ হাজার অতিথিকে কংগ্রেসে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যুবলীগের নতুন নেতা কে হবেন এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।

সেটা আগামীকাল (আজ শনিবার) যখন দ্বিতীয় অধিবেশন হবে, সেখানে কাউন্সিল সেশনে চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রার্থী হিসেবে আসবে।

অধিক প্রার্থী থাকলে তাদের একজন হওয়ার জন্য সময় দেব। সেই সময়সীমার মধ্যে সমঝোতা না হলে উপস্থিত নেতারা এবং সর্বোপরি আমাদের নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলাপ করে নতুন কমিটির চেয়ারম্যান-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করব।

যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসের প্রস্তুতি পরিদর্শন করতে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, যদি যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির রক্তের উত্তরাধিকারের কাউকে এখানে চায় পরবর্তী নেতা হিসেবে, সেটা অবশ্যই যুবলীগের অধিকার আছে।

কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের দিন মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের নেতৃত্ব ঘোষণা করা হবে কিনা- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সম্মেলন ছাড়া উত্তর-দক্ষিণ কমিটি আমরা করব কিভাবে?

আমরা আশা করছি, আমাদের জাতীয় কাউন্সিলের পর মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সম্মেলন আয়োজন করবে যুবলীগের নতুন কমিটি।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, কংগ্রেসের মাধ্যমে নতুন যে নেতৃত্ব আসবে তাদের কাজ হবে সংগঠন পরিষ্কার করা।

এর সঙ্গে হারানো ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা, অর্থলিপ্সা থেকে নেতাদের সরিয়ে ফেলা- এসবই হবে নতুন নেতৃত্বের মূল চ্যালেঞ্জ।

সূত্র মতে, এবারের কংগ্রেসে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে যুবলীগে। ইতিমধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে।

যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যানকে অব্যাহত দেয়া হয়েছে আগেই। ফলে সংগঠনটির শীর্ষ দুই পদেও পরিবর্তন আসছে তা অনেকটাই নিশ্চিত।

যুবলীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, গণভবন থেকে ‘সবুজ সংকেত’ না মেলায় তাদের দাওয়াতপত্র দেয়া হয়নি। ক্যাসিনোসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে তাদের সম্মেলন প্রস্তুতি থেকে দূরে রাখা হয়েছে।

কংগ্রেসকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে নেতাদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ৫৫ বছরের বেশি বয়সের কোনো নেতা এবারের কংগ্রেসে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারছেন না।

২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর কংগ্রেস হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ প্রায় সাড়ে সাত বছর পর সপ্তম কংগ্রেস হচ্ছে।

এ কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী এই সংগঠনের কংগ্রেসের সব প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।

কংগ্রেসস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকাকে বর্ণাঢ্য সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। মূল কংগ্রেস মঞ্চ নির্মিত হয়েছে পদ্মা সেতুর আদলে।

অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ওপর বসে কংগ্রেস উপভোগ ও বক্তৃতা করছেন- এমন একটি আবহ তৈরি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হন।

ক্যাসিনোকাণ্ডে সম্পৃক্ততা এবং দুর্নীতি ও অপকর্মের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান।

যাদের সবাই পরে সংগঠন থেকে বহিষ্কৃতও হন। গত ২০ অক্টোবর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুবলীগ নেতাদের বৈঠকে পদবাণিজ্য ও দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে ওমর ফারুক চৌধুরীকে সংগঠনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

একই বৈঠকে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য চয়ন ইসলামকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে সদস্য সচিব করে সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটি গঠন।

যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় উঠে আসছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশের নাম।

পাশাপাশি চেয়ারম্যান পদে বর্তমান কমিটির দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য- আতাউর রহমান আতা ও অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইনের নামও শোনা যাচ্ছে।

আর সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম আলোচনায় আছে, তারা হলেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, মঞ্জুর আলম শাহীন, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম ও এমরান হোসেন খান।

এ পদে অ্যাডভোকেট বেলাল হোসাইনের নামও শোনা যাচ্ছে।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- বাহাদুর বেপারী, অজয় কর খোকন, লিয়াকত সিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন ও এনআই আহমেদ সৈকত।

Exit mobile version