Site icon Jamuna Television

ইয়াবাকাণ্ডের পর বদলি করা হলো ওসি নোমানকে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ফয়জুল আজিম নোমানকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়েছে। বুধবার সকালে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তার এই বদলির আদেশ আসে। বিষয়টি বিজয়নগর থানাসহ জেলা জুড়ে টক অব টাউনে পরিণত হয়েছে।

জেলা পুলিশে একটি সূত্র জানায়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে এ্যাডিশনাল আইজি ড. মো. মঈনুর রহমান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এই বদলির আদেশে ৫ ডিসেম্বরে মধ্যে ছাড়পত্র গ্রহণ করে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে তাকে। নতুবা ৬ ডিসেম্বর থেকে তার তাৎক্ষনিক বদলি বলে গণ্য হবে। বদলির এই আদেশটি হয় ২৬ নভেম্বর।

ইয়াবাকান্ডে গত ক’দিন ধরে জেলা জুড়ে আলোচিত ছিলেন বিজয়নগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম নোমান। তার থাকার কক্ষ থেকে কয়েক’শ পিস ইয়াবা টেবলেট পাওয়া যায়। সেগুলো থানার বাবুর্চি জাহিদ ভূইঁয়া (৩০) নিজের বাসায় নিয়ে গেলে ওসি নোমানের নির্দেশে পরদিন তাকে আটক করে নিয়ে আসে বিজয়নগর থানা পুলিশ।

২২ নভেম্বর বাবুর্চি জাহিদকে নিয়ে আসার পর ৫ দিন থানায় আটক রেখে মঙ্গলবার তাকে একটি মাদক মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হয়। বাবুর্চি জাহিদকে আটক করার পর প্রকাশ পায় ইয়াবাগুলো ওসি মোহাম্মদ ফয়জুল আজিম নোমানের বিছানার নিচে ছিল। সেগুলো সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় ওসি ক্ষুব্ধ হন তার ওপর।

বাবুর্চি জাহিদ ভূইঁয়ার স্ত্রী আবেদা বেগম বুধবার দুপুরে জানান আমি ও আমার স্বামী দু’জন মিলে থানায় এক সাথে কাজ করতাম। ওসি স্যারের রুম পরিস্কার করার সময় বিছানার নিচে থেকে ঔষধ মনে করে এই গুলো বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা ইয়াবা ট্যাবলেট কী তা চিনি না। পরে জানতে পারি এগুলো ইয়াবা ট্যাবলেট। তাই ওসি স্যার ক্ষুব্ধ হয়ে আমার স্বামীকে ফাঁসিয়েছে।

তবে এই ব্যাপারে বিজয়নগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম নোমান সাংবাদিকদের জানান তার কক্ষটি পরিস্কারের পর ময়লাস্তুপ করে রাখার স্থানে ইয়াবা টেবলেটগুলো পেয়ে বাবুর্চি জাহিদ তার বাড়িতে নিয়ে যায়।

এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। ওসি বলেন, মূলত জাহিদ বিক্রি করার জন্য টেবলেটগুলো সেখানে রেখে ছিল। এর আগে থানা থেকে সে মোবাইলও চুরি করে নিয়ে গেছে। ইয়াবা ট্যাবলেট ও মোবাইলসহ তাকে আটক করা হয়। তবে তার কক্ষে কেন ইয়াবা, এই বিষয়ে কোন সু-উত্তর দিতে পারেন নি ওসি।

ঘটনার খবর পেয়ে জেলা পুলিশে র্শীষ কর্মকর্তারা ২৩ নভেম্বর রাতে থানায় গিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করেন।

বিষয়টি নিয়ে পুলিশের র্শীষ কর্মকর্তারাও বিব্রত ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ওসি ফয়জুল আজিম নোমানকে নিয়ে আমরা শুরু থেকে বিব্রত ছিলাম। এই ঘটনা ছাড়াও বেশ কয়েকটি ঘটনা পুরো জেলা পুলিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এই ঘটনায় বিজয়নগর থানা উপ-পরির্দশক (এসআই) হাসান খলিল উল্লাহ বাদী হয়ে বাবুর্চি জাহিদ ভূইঁয়া বিরুদ্ধে দেয়া মামলার এজাহারে তার কাছ থেকে ৩১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করার কথা বলা হয়। তার বিরুদ্ধে সীমান্ত এলাকা থেকে মাদক কিনে এনে বিক্রি করার অভিযোগ আনা হয়।

২৫ নভেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় জাহিদের শ্বশুর খাদুরাইল গ্রামের মর্তুজ আলীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করার উল্লেখ করা হয় এই এজাহারে।

উল্লেখ্য, ফয়জুল আজিম নোমান সীমান্তবর্তী এই থানায় পরির্দশক (তদন্ত) হিসেবে যোগ দেন ২০১৮ সালের ৬ জুন। এরপর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসাবে দায়িত্ব পান। তার এখানে যোগ দেয়ার পরই মাদক ব্যবসা বেড়ে যায় বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। অবনতি হয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও।

Exit mobile version