Site icon Jamuna Television

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিচ্ছে জার্মানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও সংকটে

বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ যখন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকছে তখন নিজেদের সব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি। জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিপর্যয়ের পর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে জার্মান সরকার। মূলত তখন থেকেই এমন একটি সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত হয়েছে তারা। বর্তমানে দেশটিতে ৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রয়েছে। এগুলো ২০২২ সালের মধ্যে বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছে জার্মান সরকার।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধ্বংসের পর সেগুলোর উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় বর্জ্য কোথায় রাখা হবে, সেটি নিয়েও বড় ধরনের সংকটে পড়েছে দেশটি। ভূমির অন্তত ১ কিলোমিটার গভীরে বিপুল পরিমাণ এ বর্জ্য রাখতে হবে অন্তত ১ মিলিয়ন বছর! এ রকম স্থান খুঁজে পাওয়া তো চাট্টিখানি ব্যাপার না।

এ বর্জ্য রাখার ‘স্থায়ী ভাগাড়’ খুঁজে বের করতে জার্মান সরকারের হাতে সময় আছে ২০৩১ সাল পর্যন্ত। উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির সদস্য জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখের পরিবেশ ও জলবায়ু নীতির চেয়ারপারসন মিরান্ডা শ্রয়াস।

তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধ্বংসের ফলে ২৮ হাজার কিউবিক মিটারের বেশি বর্জ্য তৈরি হবে যা যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বিগ বেন ক্লক টাওয়ারের মতো ছয়টি স্থাপনার সমান। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এ বিপুল বর্জ্য কোথায় নিরাপদে ব্যবস্থাপনা করা হবে, তা নিয়ে বড় সমস্যায় পড়েছে জার্মানি।

বর্তমানে সচল থাকা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় বর্জ্যগুলো পাশেই তৈরি করা সাময়িক স্থাপনাগুলোয় সংগ্রহ করা হয়। এই বিষয়ে মিরান্ডা শ্রয়াস বলেন, আপনি যদি পারমাণবিক চুল্লির জ্বালানি পরিবহন রডের সঙ্গে থাকা একটি ক্যানিস্টার খোলেন, তাহলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে, না হয়ে একটু পরেই মারা পড়বেন। কারণ, রডগুলো খুবই গরম থাকে। তাই এগুলো আগে ঠাণ্ডা করতে হবে। রডগুলো ঠাণ্ডা করতে দশকের পর দশক সময় লেগে যেতে পারে।

শ্রয়াস বলেন, রডগুলো ঠাণ্ডা বা শীতল করার জন্য জার্মানিতে কিছু অস্থায়ী জায়গা খুঁজে পাওয়া গেছে। সেগুলো স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। বর্জ্যগুলো যাতে লাখ লাখ বছর নিরাপদে রাখা যায়, সেজন্য কমপক্ষে এক কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বর্জ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ রকম ভাণ্ডার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন ভৌগোলিকভাবে খুবই স্থিতিশীল স্থান। সেখানে কোনো ভূমিকম্প হবে না। জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকবে না। ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে, এমন স্থানও নির্বাচন করা যাবে না।

২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়ানক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। মূলত এরপর থেকেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশগুলো নড়েচড়ে বসেছে।

Exit mobile version