Site icon Jamuna Television

বছরজুড়ে সোনার বাজারে অস্থিরতা

বছরজুড়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক সোনার বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করেছে। ২০১৯ সালে মূল্যবান ধাতুটির দাম গড়ে প্রায় প্রতি মাসেই বেড়েছে। এর মধ্যে জুলাই ও আগস্ট মাসে ছয় দফা দর বেড়েছে। গত ১ জানুয়ারি দেশের বাজারে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল প্রতি ভরি ৪৭ হাজার ৪৭২ টাকা। আর ১৯ ডিসেম্বর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯ হাজার ১৯৫ টাকা। অর্থাৎ প্রায় বারো মাসের ব্যবধানে ভরিতে দাম বেড়েছে ১১ হাজার ৭২৩ টাকা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম ২০১৩ সালের পর সর্বোচ্চ। চলতি বছরের ২৬ আগস্টে আউন্সপ্রতি সর্বোচ্চ এক হাজার ৬০০ ডলার দর উঠেছিল।

বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে সোনার দাম ২০১২ সালের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ভালো মানের সোনার ভরি ৬০ হাজার ৬৫২ টাকা হয়েছিল; যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দর। ১৯৭০ সালে সোনার ভরি ছিল মাত্র ১৫৪ টাকা। ১৯৮০ সালে তা ৩ হাজার ৭৫০ টাকা হয়। ১৯৯০ সালে দাম দাঁড়ায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা। ২০০০ সালের দিকে দাম ছিল ৬ হাজার ৯০৬ টাকা। ২০১০ সালে ৪২ হাজার ১৬৫ টাকায় ঠেকে মূল্যবান ধাতুটির দাম।

ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে (স্পট মার্কেট) ২০১৩ সালের এপ্রিলে সোনার দাম আউন্সপ্রতি সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৩৪ ডলার ৩১ সেন্টে উঠেছিল। ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ দাম ছিল আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৩৭১ ডলার, ২০১৫ সালে ১ হাজার ২৯৪ ডলার, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৮৯ ডলার, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৩৩৩ ডলার এবং ২০১৮ সালে ছিল ১ হাজার ৩৫৫ ডলার। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১ দশমিক ১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ৪৭৩ মার্কিন ডলার ছিল। তবে গত কয়েক মাস ধরেই মূল্যবান ধাতুটির দর বেশ ওঠা-নামার মধ্যে রয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতসহ বড় দেশগুলোর অর্থনীতিতে মন্দার প্রভাব পড়েছে সোনার দামে। এসব দেশ তাদের মুদ্রার মানও কমিয়েছে। কমেছে ঋণের সুদের হারও। ফলে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে বিনিয়োগ করছে। স্বর্ণের এই বাড়তি চাহিদার কারণে প্রভাব পড়ছে দামে।

জুয়েলার্স সমিতি বলছে, দেশীয় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় বুলিয়ন মার্কেটে সোনার দাম বেড়েছে। তাই সর্বশেষ বুধবার রাতে জুয়েলার্স সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি দেশের বাজারে সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৭ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে; যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ছে তাই তাদেরও দাম বাড়াতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বছরের শুরু থেকে পর্যায়ক্রমে আউন্সপ্রতি দাম বেড়েছে আড়াইশ’ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় একুশ হাজার টাকা। ভরিপ্রতি বেড়েছে আট হাজার টাকা। কিন্তু আমরা একবারে না বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে বাড়াচ্ছি।

আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে বিভিন্ন দেশে প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। স্বাভাবিকভাবে বিনিয়োগও কমে যাচ্ছে। শেয়ারবাজার অস্থির হয়ে উঠছে। অন্যদিকে ডলার দুর্বল হচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ডলারের বদলে সোনা বেছে নিয়েছে। এছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও সোনা কিনে রাখছেন। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কয়েক মাস ধরে বাড়ছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বাণিজ্যযুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

লন্ডনভিত্তিক সংস্থা সিএমসি মার্কেটের প্রধান বাজার বিশ্লেষক মাইকেল ম্যাকার্থি রয়টার্সকে বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার ফলে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র হিসেবে সোনার চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে।

Exit mobile version