Site icon Jamuna Television

কে এই কাসেম সোলাইমানি?

মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। গেল ২০ বছরে বহুবার যাকে হত্যার চেষ্টা করেছে মার্কিন ও ইসরায়েলি গোয়েন্দারা। সৌদি আরব ও তাদের মিত্রসহ পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থারও অন্যতম লক্ষ্য ছিলেন তিনি। বারবার সব চক্রান্ত নস্যাৎ করে বেঁচে গেলেও, হাল ছাড়েনি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা ও আরব রাষ্ট্রগুলো। বলা হয়, বিশ্ব রাজনীতি ইরাক-সিরিয়াসহ যে অঞ্চলকে ঘিরে আবর্তিত, সেই মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারের পেছনে মূল ভূমিকাই তার।

৮০’র দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় উত্থান ‘শ্যাডো কমান্ডার’ খ্যাত কাসেম সোলাইমানির। পরবর্তীতে যোগ দেন ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ শাখা- ইসলামিক রিভল্যুশনারি গার্ডে।

ইরানের সংবিধান অনুসারে, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সুরক্ষায় নিয়োজিত এই বাহিনী। মূল কাজ, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ আর সম্ভাব্য সেনা অভ্যুত্থান রোধ। গেল দু’দশক এই আইআরজিসি’র অভিজাত কুদস ফোর্সের প্রধান ছিলেন কাসেম সোলাইমানি। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বিদেশে পরিচালিত ইরানের গোয়েন্দা তৎপরতার নেতৃত্বভার ছিল তার হাতে।

জানা যায়, প্রতিবেশি ইরাকে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে শিয়া আর কুর্দিদের অস্ত্র সরবরাহ হতো সোলাইমানির নির্দেশে। পরবর্তীতে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস, আর ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্র-জাতিসংঘ ও পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো হুতি বিদ্রোহীদেরও সমর্থন দেন তিনি।

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর, ২০১২ সালে মিত্র বাশার আল-আসাদের সরকারকে পশ্চিমা মদদপুষ্ট বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতেও সহযোগিতা করেন সোলাইমানি। আইএস-সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাতেও বড় ভূমিকা ছিল তার। ২০১৪-১৫ সালে আইএস নির্মূলে তৎকালীন ইরাক সরকার আর শিয়া বিদ্রোহীদের এক ছাদের নিচেও আনেন তিনি।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বহুমুখী সংঘাত-সহিংসতায় জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ। বলা হয়, তেলসমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে ইরানের প্রভাব বিস্তারের মূল কারিগর সোলাইমানি। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের বিরুদ্ধে খামেনি প্রশাসনের আজকের শক্ত অবস্থানের জন্যও প্রশংসিত তিনি। গেল মার্চে পান ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা ‘অর্ডার অব জুলফিকার’।

যে কারণে নিজ দেশে বীরোচিত মর্যাদা পেয়েছেন সোলাইমানি, ঠিক সেই একই কারণে বরাবর তিনি চক্ষুশূল ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, সৌদি আরবসহ ও পশ্চিমা বিশ্বের। গেল অক্টোবরেই তাকে হত্যায় ইসরায়েলি ও আরব গোয়েন্দাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করেছিলো তেহরান। যদিও শেষ রক্ষা হলোনা এবার। প্রশ্ন উঠেছে- সোলাইমানির মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যকে ঘিরে আবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির নতুন সমীকরণ কেমন হবে।

Exit mobile version