Site icon Jamuna Television

১ জানুয়ারি ‘গণ জন্মদিবস’!

পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন উদযাপন আরও নতুন মাত্রা পায় যখন ফেসবুকে জানায় আজ আপনার পরিচিত অনেকগুলো মানুষের জন্মদিন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে ১ জানুয়ারিই বুঝি সবচেয়ে বেশি মানুষ জন্মেছে এই বঙ্গে।

আজ কী সত্যিই আপনার জন্মদিন? এর উত্তরে অনেকেই মুচকি হেসে উত্তর দিবে- না। আসল জন্মদিন না হলেও ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা স্কুল সার্টিফিকেটের বদান্যতায় আজ তাদের জন্মদিন। অনেকেই আবার ১ জানুয়ারি জন্মদিন নিয়ে অস্বস্তিতে থাকেন। বলতে চান না, আজ তাদের জন্মদিন। আবার কাউকে জন্মদিনের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, কোনটা বলবো আসলটা নাকি সার্টিফিকেটেরটা। ১ জানুয়ারি আসল জন্মদিন হওয়া সত্ত্বেও হাসির পাত্র হওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে অনেকের। অথচ জন্মদিন ব্যক্তি জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন।

আসল জন্মদিন না হওয়া সত্ত্বেও কেন, কীভাবে ১ জানুয়ারি অনেকের জন্মদিন হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে যাচ্ছে ?

এরকম প্রশ্নে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহেল বলেন, আমার আসল জন্মদিন ২৪ আগস্ট কিন্তু স্কুল সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমার জন্মদিন জানুয়ারির এক তারিখ। পরে সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমার ন্যাশনাল আউডি কার্ডেও এই তারিখ দেয়া হয়। এতে করে আনুষ্ঠানিকভাবে আমার জন্মদিন হয়ে পড়ে জানুয়ারির এক তারিখ।

অন্যদিকে ইডেন কলেজের ছাত্রী তিশা বলেন, স্কুলের নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের সময় আমার আসল জন্মদিনের বদলে ১ জানুয়ারি জন্মদিন হিসেবে দিয়ে দেন স্কুলের শিক্ষক, এটা কেনো করেছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান বেশিদিন সরকারি চাকরি করা যাবে।

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র শোয়েব জানায়, আমার জন্মদিন বছরের অন্য মাসে হলেও আমার পিতা জন্মদিন জানুয়ারির এক তারিখ দেন। কারণ তাদের ধারণা পড়াশুনা শেষ করে সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে সুবিধা হবে। বাংলাদেশে ৩০ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করা যায়। আর ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে বের হতে ২৫-২৬ বছর চলে যায়। এমনকি এই চাকরি পাওয়ার জন্য আমার বয়স ২ বছর কমিয়ে স্কুলের রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহান বলেন, আমি আমার আসল জন্মদিন ভুলে যাচ্ছি কেননা কোথাও এটা ব্যবহার করতে হয় না। আমার বাবা-মা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই নাকি এই মিথ্যা জন্মদিন বানিয়েছেন। বন্ধুদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গেলে আমি মানসিক অস্বস্তিতে থাকি। একধরনের হীনমন্যতায় ভুগি।

পাসপোর্ট ও ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখলেই বোঝা যায় বাংলাদেশের কতো মানুষ এই মিথ্যা জন্মদিন পালন করে আসছেন। তবে বর্তমানে উপজেলায় পর্যায়ে জন্মসনদের ব্যবস্থা থাকায় এই হার কমে আসছে।

অবশ্য শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের আরও অনেক দেশে জানুয়ারির ১ তারিখে জন্মদিনের হিড়িক পড়ে যায়। বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত দেশগুলোতে এই হার অনেক বেশি। আফগানিস্তানে বিপুল পরিমাণ মানুষের জন্মদিন হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে আছে ১ জানুয়ারি। নিয়মিত যুদ্ধের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া দেশটিতে শিশুদের সঠিক জন্ম তারিখ মনে রাখার কাজটি স্বভাবতই কঠিন। ১ জানুয়ারি আফগানদের জন্য যুদ্ধের দিনগুলো স্মরণের উপলক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই গেল যারা জন্মদিন মনে রাখতে পারেনি তাদের কথা। এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয় যারা নিজেদের সঠিক জন্ম তারিখ জানেন কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ১ জানুয়ারি তাদের জন্মদিন হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়েছে। শরণার্থীদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর (UNHCR) ডকুমেন্টস না পেলে ১ জানুয়ারি জন্মদিন ধরে শরণার্থীদের নিবন্ধন করে। ভিয়েতনাম, সুদান, সোমালিয়া, সিরিয়ার লাখ লাখ মানুষের জন্মদিন ১ জানুয়ারি। তাই, বছরের প্রথমদিনকে ‘গণ জন্মদিবস’ বললে ভুল হবে এতোটুকু।

যমুনা অনলাইল: টিবিজেড/টিএফ

 

Exit mobile version