Site icon Jamuna Television

যেভাবে ক্রিকেটার হয়ে উঠে আকবর আলী

নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন অধিনায়ক আকবর আলী। এতে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। আর আকবরের জন্য আনন্দে ভাসছে রংপুরবাসী।

মাত্র ৬ বছর বয়সে পাড়ার গলিতে টেপ টেনিস বল আর ভাঙা ব্যাটে খেলা শুরু করেছিলেন আকবর। যেন ক্রিকেট না বুঝেই ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক। এভাবেই খেলতে খেলতে বড় ভাইয়ের পরামর্শে একাডেমিতে অনুশীলন শুরু হয় তার। বর্তমানে সে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

রংপুর মহানগরীর পশ্চিম জুম্মাপাড়া হনুমানতলা গ্রামের ফার্নিচার ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোস্তফা ও সাহিদা বেগম দম্পতির ৪ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট ক্রিকেট পাগল ছেলে আকবর আলী।

ছেলের ক্রিকেটের প্রতি আসক্তি দেখে ফার্নিচার ব্যবসায়ী বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা সিসিসি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মালিক আলতাব হোসেনের পরামর্শে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে অসীম মেমোরিয়াল ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দেন। তখন আকবর লায়ন্স স্কুল এ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন।

সেই ক্রিকেট একাডেমির কোচ অঞ্জন সরকারের হাত ধরে তার ক্রিকেটের সত্যিকারের হাতেখড়ি। সেখানে তিনি ৩ বছরের বেশি সময় প্রশিক্ষণ নেন। ২০১২ সালে দেশের সেরা ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ভর্তি হন আকবর আলী। তারপর শুধুই তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প।

বিকেএসপির বয়সভিত্তিক দলে খেলে সুযোগ পেয়ে যান জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতাও বাড়তে থাকে সমানতালে।

রংপুরের বেগম রোকেয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিশু নিকেতনে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে ভর্তি হন লায়ন্স স্কুল এ্যান্ড কলেজে। সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়াকালীন বিকেএসপিতে চান্স পান। সেখানে লেখাপড়া ও খেলাধুলা একসঙ্গে চলছিল।

২০১৬ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পান। আর ২০১৮ সালে এসএইচসিতে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪.৪২ পান। তিনি খেলার পাশাপাশি লেখাপড়াও দারুণ মনোযোগী।

আকবর আলী ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঠে গেলেই জায়নামাজে বসে থাকতেন একমাত্র বড় বোন খাদিজা খাতুন রানী। জায়নামাজে বসে ছোট ভাইয়ের জন্য দোয়া করতেন তিনি। যেন ভাই ভালো খেলে সুস্থ শরীর আর জয় নিয়ে ফিরতে পারে ঘরে।

গত ২৪ জানুয়ারি যমজ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিনি মারা যান আকবরের বোন। একমাত্র বোনের মৃত্যুশোককেই শক্তিতে পরিণত করেছিলেন আকবর।

রোববার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আকবরের মা সাহিদা আক্তার বলেন, আকবর দেশের জন্য খেলেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো বিশ্বকাপ জয়ের শিরোপা তার হাত ধরেই আসলো। এটা আমাদের জন্য গর্বের। তেমনি রংপুরবাসীর জন্যেও গর্বের।

তিনি ছেলের জন্য দেশবাসীর দোয়া কামনা করে বলেন, আগামীতে যেন আকবর আলী তার সাফল্য ধরে রাখতে পারে।

আকবরের বাবা মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, আকবর আলী পুরো বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। সে এখন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। যে কোনো পর্যায়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে বিশ্বজয়ের সাফল্য এনে দেয়ার কারিগর।

এ সময় তিনি সবার কাছে তার ছেলের জন্য দোয়া কামনা করেন।

Exit mobile version