Site icon Jamuna Television

বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকাশ চোখ

চীনের ফাস্ট টেলিস্কোপ- যা মহাবিশ্বের জন্ম রহস্য খুঁজতে চেষ্টা করছে। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম একটি প্রাকৃতিক গোলাকার উপত্যকা, ডাওয়াডাং ডিপ্রেশনে বসানো হয়েছে টেলিস্কোপটি। বিশাল ধাতব শরীর নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী রেডিও টেলিস্কোপ। এটির আনুষ্ঠানিক নাম ফাইভ হান্ড্রেড মিটার অ্যাপারচার স্ফেরিক্যাল টেলিস্কোপ- যা সংক্ষিপ্ত নাম ‘ফাস্ট’ নামে বেশি পরিচিত। চীন এই টেলিস্কোপকে ডাকছে ‘স্কাই আই’ বা ‘আকাশ চোখ’ নামে।

ফাস্ট টেলিস্কোপটি মহাবিশ্বের গভীরতর এবং অন্ধকারতম কোণে কোণে অনুসন্ধান করে জানার চেষ্টা করছে কিভাবে এ বিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে এবং অন্য কোথাও জীবনের অস্তিত্ব আছে কিনা। এটির ব্যাস আধ কিলোমিটার। এর আগের বড় টেলিস্কোপটি ছিল পুয়ের্তো রিকোর আরিসিবো পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের, যার ব্যাস ৩০৫ মিটার।

২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নির্মাণ শুরু হওয়া ফাস্ট শুধু সবচেয়ে বড় যন্ত্রই নয়, বর্তমানে চালু থাকা যে কোনো রেডিও টেলিস্কোপের চেয়ে এটি ২.৫ গুণ বেশি স্পর্শকাতর। এর নির্মাতারা আশা করছেন, এ রেডিও টেলিস্কোপটি যেসব সিগনাল ধরতে পারবে, তা থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য এবং বিবর্তনের তথ্য উদ্ঘাটন করা যাবে। এর প্রধান কাজ হল মহাকর্ষীয় তরঙ্গ অনুসন্ধান করা। এটির যে বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত করছে, তা হল মহাবিশ্বের তরঙ্গ বিস্ফোরণের তথ্য দ্রুত শনাক্ত করার ক্ষমতা। এ ধরনের তীব্র শক্তির বিস্ফোরণ মাত্র ১ মিলি সেকেন্ড স্থায়ী হয়ে থাকে। এ বিস্ফোরণ এখনও জ্যোতির্বিদদের কাছে একটি রহস্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেলিস্কোপটির কার্যকারিতা চিত্তকর্ষক। প্রথম পরীক্ষার সময় ১০২টি নতুন পালসার শনাক্ত করেছে ফাস্ট। পালসার হচ্ছে এক ধরনের ঘূর্ণনরত নক্ষত্র, যা নিয়মিত বিরতিতে বিকিরণ নির্গত করে। মহাকাশে গ্যাসীয় পদার্থ, যেমন হাইড্রোজেন অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ফাস্ট টেলিস্কোপের দক্ষতা অনুপ্রাণিত করে তুলছে বিজ্ঞানীদের। এতে তারা ছায়াপথের গতিশীলতার পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

অন্য টেলিস্কোপের তুলনায় চীনের ‘স্কাই আই’ অনেক বেশি এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে পারে, যার মানে এটা অনেক বেশি মহাজাগতিক বস্তু শনাক্ত করতে পারে।

ফাস্টের পেছনে খরচ হয়েছে ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ দুরবিনে ৪ হাজার ৪০০ অ্যালুমিনিয়াম প্যানেল রয়েছে, যা আকাশের বিভিন্ন দিকে কেন্দ্রবিন্দু করতে পারে। এ ক্ষমতাই আগের টেলিস্কোপগুলোর তুলনায় ফাস্টকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। ফাস্টের কাছে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনেক প্রত্যাশা। তারা মনে করছেন, সামনে বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই ফাস্ট টিমের নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি এবং সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে, যা এ যন্ত্রটির সংগ্রহ করা তথ্যাদির সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পারবে।

Exit mobile version