Site icon Jamuna Television

১৮ বছর পর নিখোঁজ মায়ের দেখা পেলো সন্তান

জাকারিয়া হৃদয়, পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

চলার পথে দাদীকে দেখে বাবাকে ফোন। অতঃপর ছেলে পেল মায়ের সন্ধান, তাও ১৮ বছর পর! এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়েছে। এলাকাবাসীর সহায়তায় যার ঠাঁই হয়েছিল ফুটপাতের একটি ঘরে আজ ১৮ বছর পর তিনি ফিরে গেলেন নিজ ঠিকানায়। আবেগআপ্লুত স্থানীয় কাউন্সিলর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলো ৭০ বছরের বৃদ্ধা বকুলী রানীকে।

পটুয়াখালী শহরের তিতাস সিনেমা এলাকার রাস্তার পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরেই গত ৪ বছর ধরে নাম না জানা এক বৃদ্ধার ঠাঁই হয়েছিল। এলাকার কাউন্সিলরসহ স্থানীয়রা যে যার মতো করে এতদিন তাকে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছিলেন। গত দুই দিন আগে হঠাৎ ওই বৃদ্ধার নাতি রিপন চন্দ্র হাওলাদার তাকে দেখে চিনে ফেলে। সাথে সাথে তার বাবাকে ঘটনাটি জানালে তিনি সেখানে ছুটে আসেন। তৈরি হয় এক মিলন মেলার।

বকুলী রানীর স্বামীর নাম মৃত মাখম চন্দ্র হাওলাদার। তার বাড়ী পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার পাড়ডাকুয়া এলাকার তালতলা গ্রামে বলে জানান তার ছেলে ঠাকুর চন্দ্র হাওলাদার। ১৮ বছর আগে বকুলীর মেয়ে আলো রানীর বিয়ে হয় ভারতে। তাকে খুঁজতে ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হয় বকুলী রানী। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তিনি জানান, তার ছেলে রিপন চন্দ্র হাওলাদার ১৮ বছর ধরে নিখোঁজ দাদিকে গত দুইদিন আগে রাস্তায় দেখতে পেয়ে চিনতে পারে। সাথে সাথেই সে ফোন করে বিষয়টি জানায়।

বকুলী রানী দীর্ঘ ১৪ বছর কোথায় ছিলেন কেউ জানে না। তবে গত চার বছর আগে শহরের তিতাস সিনেমা এলাকার মৃধা হোটেলের সামনে ছিন্নবস্ত্র ও রোগাক্রান্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে লাইজু নামের এক হোটেল মালিক তাকে আশ্রয় দেন। রোববার বিকালে বকুলী রানীর পরিচয় মিললে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন লাইজু নিজেও।

বকুলী ফিরে যাচ্ছে এ খবরে অশ্রুসিক্ত হয় পড়েন তাকে সহযোগিতা করা অনেকে। তাকে এক নজর দেখতে ভিড় করেন তারা। অসহায় এক মাকে দেখভাল ও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে পেরে নিজেকে গর্বিত ভাবছেন স্থানীয় কাউন্সিরল কাজল বরণ দাস। জানান, বিবেকের তাড়না থেকে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে দীর্ঘ চার বছর বকুলী রানীকে সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন। এই বৃদ্ধা এলাকায় সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। কথা কম বলতেন। মনে হতো মানসিক ভারসাম্যহীন তিনি। আশপাশের বাসায় গিয়ে খাবার খেতেন। আমরা সবাই মিলে একটি ঝুপড়িঘর তুলে দিয়ে সেখানে তার থাকার ব্যবস্থা করি।

মানুষ মানুষের জন্য- এমন চেতনা সকলের মধ্যে বহমান থাকবে এমন প্রত্যাশার কথাই জানিয়েছেন বকুলীর পাশে দাঁড়ানো মানুষগুলো।

Exit mobile version