Site icon Jamuna Television

হস্তক্ষেপমুক্ত বিচার বিভাগের প্রত্যাশা সুপ্রিম কোর্ট দিবসে

আজ মঙ্গলবার প্রথমবারের মত পালিত হচ্ছে সুপ্রিমকোর্ট দিবস। এ উপলক্ষে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বেলা ২টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞায়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। দিবসটি উপলক্ষে স্মারক গ্রন্হের মোড়াক উন্মোচন করা হবে।

১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রথম শুরু হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম। সে হিসেবে ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও অবকাশকারীন ছুটি থাকায় আজ দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

এদিকে দিবস উপলক্ষে গতকাল এক বিবৃতিতে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপমুক্ত বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান দেশের ছয় শীর্ষ আইনজীবী। একই সঙ্গে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথকীকরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের দিক নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ সংবিধান ও সর্বোচ্চ আদালতে রায়ের প্রতি সম্মান দেখাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ. এফ. হাসান আরিফ ও ফিদা এম. কামাল।

তারা বলেছেন, “১৯৭২ সালে ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এবার প্রথম সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালিত হতে যাচ্ছে আগামী ২ জানুয়ারিতে। এমন একটা সময়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে যখন এদেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য। এই উপলক্ষে,বাংলাদেশের সংবিধান এর অখণ্ডতা রক্ষা, সমর্থন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এদেশের নাগরিকদের সকল মৌলিক অধিকার বলবৎ করার আদেশ বা নির্দেশ, সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের পাশাপাশি সংবিধানের যে কোন অংশের সঙ্গে সঙ্গতিহীন কোন আইন বা সরকারী বিধি বা আদেশ যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এমন কোনো প্রশ্ন কিংবা জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর গুরুত্বপূর্ণ রায় ও ঐতিহ্য গর্বের সাথে স্মরণ করছি।”

তারা আরও বলেন, “এক্ষেত্রে ৭টি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ গঠনের বিষয়ে প্রণীত সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বাতিল, সামরিক ফরমান জারি সংক্রান্তে আনা সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ১০০ বছরের জন্য লীজ প্রদান বাতিল, ২০০৭ সালের ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার বাতিল সংক্রান্ত রায় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংসদ কর্তৃক মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্তে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা ও বাতিলের রায়সহ জনস্বার্থে দেওয়া অসংখ্য রায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপরোল্লিখিত রায় সমূহের মাধ্যমে এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে জনগণের অধিকার রক্ষার্থে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও ভারসাম্য কোনো অবস্থাতেই পরিবর্তন ও ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।”

বিবৃতি বিশিষ্ট আইনজীবীরা আরও বলেন, “সম্প্রতি মাসদার হোসেন মামলার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি পুনঃস্মরণ করতে গিয়ে দেখা যায় যে অধঃস্তন আদালতের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিধি প্রণয়নে সংবিধানের মূলধারার বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। এটা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বকীয় অবস্থানের জন্য সংবিধান যে সুরক্ষা দিয়েছে তা সংরক্ষণ/বাস্তবায়ন করা সর্বোচ্চ আদালতের দায়িত্ব।”

তারা বলেন, “সর্বোচ্চ আদালত দিবসে আমরা কি বার্তা প্রেরণ করব? এ বিষয়ে জনগণ ও সুশীল সমাজকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ঐক্য মতের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে দেশের সাংবিধানিক ভারসাম্য রক্ষা করার প্রচেষ্টাকে একত্রিত করে দৃঢ় ও সংকল্পিতভাবে জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধার করা এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ভিত্তিতে একটি উপযুক্ত স্বাধীন ও পৃথক বিচার বিভাগের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ব্যতীত অন্য কোন বিকল্প নেই।”

 

Exit mobile version