হলি আর্টিজান হামলার ঘটনায় নিয়ে কোনো প্রকার চলচ্চিত্র, প্রামান্য চিত্র বা নাটক নির্মাণ না করতে ভারতীয় চলচ্চিত্রকার মহেশ ভাট ও বাংলাদেশি নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে ল’ফার্ম ‘লিগ্যাল কাউন্সেল’। পাশাপাশি এ বিষয়ে আজ জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
‘লিগ্যাল কাউন্সিল’র অন্যতম সত্ত্বাধিকারী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা যমুনা নিউজকে জানান, অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাধারণ সম্পাদক মিসেস রুবা আহমেদের পক্ষে তারা আইনি নোটিশটি পাঠিয়েছেন। হলি আর্টিজানের মর্মান্তিক ঘটনায় মেয়ে অবিন্তা কবিরকে হারিয়েছেন রুবা আহমেদ।
ব্যারিস্টার মিতি সানজানা বলেন, ওনাদের মেয়েকে নিয়ে কোনো চলচ্চিত্র বা কোনো ধরনের ভিজ্যুয়াল নির্মাণ হোক সেটি তারা চান না। ভারতীয় নির্মাতা মহেশ ভাট তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। একই সাথে এই বিষয়ে যেখানে যারাই কাজ করছে বা করবে তাদের আমরা আমাদের মক্কেলের অবস্থান জানিয়ে দেবো। প্রয়োজনে অন্যান্য আইনি পদক্ষেপ নেবো।
হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডি নিয়ে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর চলচ্চিত্র ‘শনিবার বিকেল’ ইতিমধ্যেই সেন্সর বোর্ডে আটকে গেছে। এটিকে বাক স্বাধীনতা ও চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন সিনেমাটির সাথে সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ব্যারিস্টার মিতি সানজানার বক্তব্য, এটি বিশ্বজুড়ে আলোচিত ঘটনা। বিদেশিরাও এর সাথে যুক্ত। ভিকটিমদের থেকে সম্মতি নেয়ার ব্যাপার আছে। তাছাড়া, এখানে যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা ‘হোম গ্রোন’ জঙ্গি। এ বিষয়ে নিয়ে আমরা যতই চলচ্চিত্র বা মোশন পিকচার নির্মাণ করবো এটা আমাদের দেশের ভার্বমূতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে আমরা মনে করছি। সারাবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর এমন বিভিন্ন সিনেমা উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমাটি মুক্তি পায়নি। সেক্ষেত্রে তাদের মক্কেল কীভাবে নিশ্চিত হলেন সেখানে অবিন্তা কবিরের চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কিছু আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মিতি সানজানা জানান, আমরা সকল সম্মানিত প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা, কলাকুশলী, মিডিয়া সংস্থা, মিডিয়া বিতরণকারী সংস্থা, লেখক, ক্লিপ-লেখকগণকে হলি আর্টিজানের ঘটনাকে তুলে ধরে বা অবিন্তা কবিরের প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ সাদৃশ্যতা রয়েছে এমন কোনো চরিত্র তুলে ধরে যেকোনো প্রকার পূর্ণ বা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, টেলিফিল্ম, নাটক, নাটিকা, উপন্যাস, গল্প, ইত্যাদির রচনা, প্রযোজনা, পরিচালনা, বিতরণ, বিপণন, উপস্থাপন, প্রকাশনা, অভিনয় ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছি। গোটা বিষয়টা হয়তো আমরা আটকাতে পারবো না। তবে অবিন্তা কবিরের সাথে সদৃশ কিছু থাকলে আমরা যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। কারণ সেটি ভিকটিমের পরিবারের মাঝে দুর্ঘটনার করুণ এবং কষ্টদায়ক স্মৃতিগুলােকেই আবার জাগিয়ে তুলবে, যা অবিন্তার মা এবং তার পরিবার প্রতিনিয়ত ভুলে থাকার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ শনিবার বিকেল সিনেমার বাংলাদেশি প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়া ও জার্মানের প্রযোজক টেন্ডেম প্রডাকশনকে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে ভারতের তিন চলচ্চিত্রকার মহেশ ভাট, অগ্নিদেব চ্যাটার্জি, ও গুলপানাকেও নোটিশ দিয়েছি। এরা প্রত্যেকেই হোলি আর্টিসানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্রসহ নানা রকম নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তারা আমাদের ক্লায়েন্ট ‘অবিন্ত কবির ফাউন্ডেশন’-এর মিসেস রুবা আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন তথ্যের জন্য। তাদের মধ্যে গুলপানাক জবাব দিয়েছেন নোটিশ পেয়েই। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন যে হোলি আর্টিসান নিয়ে কোনোরূপ নির্মাণ থেকে বিরত থাকবেন। আশা করছি বাকিরাও বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
ভারতের নির্মাতা মহেশ ভাটকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে ১১ ফেব্রুয়ারি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।