Site icon Jamuna Television

করোনায় ঐক্য: বিলুপ্ত প্রায় সার্কের জেগে ওঠা

মাহফুজ মিশু:

করোনাভাইরাস এক করলো দক্ষিণ এশিয়াকে। সুপ্ত অবস্থা থেকে যেন বেরিয়ে এলেন আট দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান। বহু বছর পর একসাথে সার্কের নেতারা। হোক না ডিজিটালি! তারপরও আশা জাগানিয়া!

রোববার বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়েছিলেন তারা। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংকট, করোনার সংক্রমণ নিয়ে নিজ নিজ দেশের অবস্থান, গৃহীত পদক্ষেপ, ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন নেতারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দারুণ এই উদ্যোগে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সাড়া দিয়েছেন সবাই। এমনকি ভারতের চির বৈরি পাকিস্তানও। যদিও দেশটির সরকার প্রধানের পক্ষে তার স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা যোগ দিয়েছিলেন এই ঐতিহাসিক এই ভিডিও কনফারেন্সে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে খানিকটা অস্বস্তির ছিল নরেন্দ্র মোদি ও অন্যান্য নেতাদের জন্য। কারণ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বৈশ্বিক সংকটকালীন এ উদ্যোগে সাড়া দিলো না পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব। আবার, সাত শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার সাথে একজন আমলার যুক্ত হওয়া কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বেমানান। কিন্তু যেহেতু ইসলামাবাদ রাজি, তাই তাদের বাদ দেয়ার মতো অদূরদর্শিতা দেখায়নি ভারত সরকার।

কনফারেন্সের সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিঃসন্দেহে, করোনা মোকাবিলায় অভিন্ন তহবিল গড়ার প্রস্তাব। কেবল প্রস্তাব রেখেই ক্ষান্ত হননি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, বিশেষায়িত সেই তহবিলে ১০ মিলিয়ন ডলার দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। বাংলাদেশি টাকায় এই পরিমাণ ৮৫ কোটি টাকা। এই প্রস্তাবে প্রাথমিক সাড়া দিয়েছে বাকি সবাই। বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ থাকলে সব সংকটই মোকাবিলা সম্ভব।

ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দেন। পরামর্শ দেন, তথ্য বিনিময়ের। সেজন্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবদের কথা বলার ওপর জোর দেন তিনি। শেখ হাসিনা দীর্ঘমেয়াদে এমন সংকট সমাধানে একটা সার্ক বা দক্ষিণ এশীয় ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার প্রস্তাব করেন। বলেন, সবাই সম্মত হলে বাংলাদেশ এটি বাস্তবায়ন করতে পারে।

এই ভিডিও কনফারেন্সের আউটপুট বা ফলাফল যাই হোক না কেন, সেটি অনেকগুলো বার্তা দিল গোটা বিশ্বকে। প্রথম বার্তাটি খুবই স্পষ্ট, পরিষ্কার। বিভেদ-বিরোধ-ভিন্নমত থাকলেও সংকটে এখনো এক হতে পারেন এই অঞ্চলের নেতারা। দ্বিতীয়ত, জোট হিসেবে সার্কের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়নি এখনো। যদিও ২০১৬ সালে পাক-ভারত বৈরিতায় সবশেষ ইসলামাবাদ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। সবশেষ একসাথে নেতারা সার্কের বৈঠকে বসেছিলেন কাঠমান্ডুতে ২০১৪ সালে। তারপর থেকে মূলত কোয়ারেন্টাইনেই ছিল সম্ভাবনার এই জোট।

এবারের এই করোনা বিষয়ক ভিডিও কনফারেন্সের উদ্যোগ জানান দিল, নরেন্দ্র মোদির চিন্তায় কেবল ভারত নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়া। বৃহৎ, শক্তিশালী দেশের এই নেতা দেশের সীমানা পেরিয়ে আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক নেতা হওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। যদিও নাগরিকপুঞ্জি নিয়ে দিল্লির সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে নতুন করে দেশে বিদেশে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। করোনা মোকাবিলায় এই উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তি পুনঃনির্মাণে খানিকটা যে সহায়ক হলো, সেটিও মনে করছেন অনেকেই।

প্রভাব যাই হোক, করোনাভাইরাস যে একটি চূড়ান্ত সংকট, সেটি দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা বুঝেছেন, সেটি মোকাবিলায় একসাথে কাজ করতে চেয়েছেন, নগদ অর্জন হিসেবে এটিও কম নয়। দেখার বিষয় হলো, এটা কী উপাত্তে, কোন সময়ে, কতখানি কার্যকর হয়? কারণ, ওই যে, ঘর পোড়া গরু, সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়! আমাদের অবস্থা হয়েছে সেরকম। সার্ককে ক্রমাগত ব্যর্থ হতে দেখা, এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের প্রত্যাশা, কার্যকর হোক ১৫ মার্চের উদ্যোগ, ঐক্যবদ্ধ হোক আমাদের নেতারা, ভাল থাকুক সার্ক তথা দক্ষিণ এশিয়া।

লেখক: যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি।

Exit mobile version