Site icon Jamuna Television

করোনায় কুপোকাত

অধ্যাপক ডা: এস এম মোস্তফা জামান

নভেল করোনাভাইরাস সৃষ্ট কোভিড-১৯ ইতিমধ্যে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে চিন্হিত হয়েছে।
লভেল করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হতে হবে। কিন্তু আতঙ্কিত না হওয়ার উপায় কি? আমরা কি প্রস্তুত করোনার হিংস্র থাবাকে প্রতিহত করতে?

🪁করোনাকে নিয়ে মজা করবেন না:
যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় করোনাভাইরাস নিয়ে এবং এর প্রভাব নিয়ে মজা করছেন তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, করোনা কে নিয়ে করুনাও করবেন না, আবার মজাও করবেন না।
কেউ কেউ কোভিড-১৯ পুরস্কার বিষয়ক রম্য স্টাটাস দিচ্ছেন। এসব বন্ধ করুন।

🪁কোয়ারেন্টিন বনাম আইসোলেসন :
এই দুটি শব্দ অনেকের কাছেই নতুন মনে হলেও দুটি শব্দই অনেক পুরনো। মহামারী এলেই এদের আগমনী গান শোনা যায়। ফেবুতে দেখলাম স্বামী স্ত্রী একসাথে কোয়ারেন্টিনে। এই নিউজ দেখে এক প্রবাসী দম্পতিও ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন কোয়ারেন্টিনে যাবার। চায়ের কাপে ঝড় বইছে এই দুটি শব্দের ব্যাখ্যা বোঝানোর জন্য। আবার অনেকেই এপিডেমিওলোজিস্ট না হলেও মাস্টার হয়ে গেছেন । তবে কোয়ারেন্টিনে থেকেও অনেকে আইন মানছে না। তাই বাধ্য হয়েই জেল জরিমানা …..
শুধু বাঙালী নয় বিদেশেও অনেকে জরিমানা গুনছেন আইন অমান্য করে।
তাই বিনীত নিবেদন যদি কোভিড-১৯ বা করোনার উপসর্গ থাকে তাহলে অবশ্যই আইসোলেসনে যাবেন। অতি সত্ত্বর আইইডিসিআর এর হটলাইনে যোগাযোগ করুন।
যদি উপসর্গ না থাকে কিন্তু ঝুকিপূর্ন বিদেশ থেকে সদ্য দেশে এসেছেন বা এ রোগ থাকতে পারে -এরূপ তীব্র সন্দেহের অবকাশ থাকলে তাকে কিছুদিনের জন্য পৃথক রাখুন। তবে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্হায় আপনার মোবাইল ফোনটি আপনার সঙ্গী হিসেবে থাকতে পারবে। এ সময়ে একটি রুমে আলাদা থাকতে হবে যাতে করে পরিবার, এই জাতি সুরক্ষা পায় । কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহার্য তোয়ালে, টিস্যু পেপার, রুমাল একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে পরে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আরো অনেক কথা আছে কোয়ারেন্টিন আর আইসোলেসন নিয়ে। ম্যারী ম্যালন নামে এক ব্যাক্তিকে ১৯০৭ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য। ওই সময়ে টাইফয়েড ছিল আজকের করোনার মতো। আপাত সুস্থ ম্যারী প্রায় ২৬ বছর (সর্ব সাকুল্যে) কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। নিজের জীবন দিয়ে এই পৃথিবীকে তিনি টাইফয়েড জীবানু মুক্ত করে গেছেন।

🪁করোনায় কিট ইস্যু :
করোনায় কুপোকাত জনজীবন। ইতিমধ্যে দশজন …
কয়েকদিন পর কি হবে। যখন উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম থেকে ঘিরে ধরবে । বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হা বলছে -টেষ্ট টেস্ট টেস্ট …..
আর আমাদের এ কয়টি কিট দিয়ে কি হবে। যুদ্ধকালে এত কম অস্ত্র দিয়ে কি হবে। চলছে এসব আলোচনা।

আমরা এখন পর্যন্ত যে নিয়মে ভাইরাস শনাক্ত করছি তার নাম পলিমারেজ চেইন রিএ্যাকশন (পিসিআর)। এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি ভাইরাস শনাক্তকরণের। কিন্তু এটি সময় সাপেক্ষ আর ব্যয়বহুল। মুখগহবর বা নাসারন্ধ্রের লালা পরীক্ষা করে এই পরীক্ষা শুধুমাত্র আইইডিসিআরে সম্ভব।
কিন্তু এখন সময় হয়েছে রাাপিড কিট চ্যালেন্জ নেবার। মাত্র দশ মিনিটে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করতে পারে এই কিট। যা এখন সময়ের দাবি। যদিও সেনসিটিভিটি শতকরা ৯৫ ভাগ। চায়না থেকে এ কিট যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য এবং আফ্রিকার কিছু দেশও এই কিট ব্যবহার করছে। তাতে করে বাংলাদেশের সব জেলা উপজেলা লেভেলে এই পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। সবাইকে ঢাকাও আসতে হবে না। এটি অত্যন্ত কম খরচে মাত্র ৩৫০ -১০০০ টাকায় এই পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। এমনকি কোয়ান্টিনে যারা থাকবেন তারাও টেষ্ট করে নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে সরকারের কড়া নজরদারী প্রয়োজন। নইলে অনেকে অসাধু ব্যবসায়ে জড়াতে পারে। প্রয়োজনে টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।

🏹Theory of Biological Weapon:
এই থিওরিতে কারা কারা একমত- হাত তুলেন।
চীনের শক্তিশালী অর্থনীতিতে ধ্বস নামানোর জন্যই আমেরিকা এই মনুষ্য তৈরি ভাইরাসকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছেন। আবার ইরানকেও একটা শিক্ষা দিয়েছেন । আমেরিকার সাথে নাকি ইসরায়েল ও আছেন ।

🏹এইচ আই ভি (HIV) র সাথে করোনার সক্ষতা:
এইচআইভি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ দিয়ে যেহেতু করোনায় মুক্তি মিলেছে। তাই অনেকের ধারনা এইডসের মতোই একটু অন্যভাবে ভাইরাসটির উৎপত্তি হয়েছে।

😂গবেষণার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া :
কারো কারো ধারনা ভাইরাস নিয়ে বেশি বেশি গবেষণার জন্যই গবেষণাগার থেকে ভাইরাসটি পালিয়ে লোকালয়ে চলে এসেছে।

🐐থিওরি অব “গো মূত্র এবং গোবর”
করোনা ভাইরাসের সাথে লড়তে পারে একমাত্র গোমূত্র। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা যখন করোনার প্রতিষেধক তৈরীর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিক তখন থিওরি অব “গোমূত্র এবং গোবর “ নিয়ে বিজ্ঞান মনস্ক মানুষের কি করা উচিত?
শুধু কি তাই নিজেরা খাচ্ছেন এবং অপরকেও দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো গবেষণা আছে কি? একবিংশ শতকেও কুসংস্কার ….

👩‍❤️‍💋‍👩করোনার সাম্যবাদ :
নভেল করোনা বিনা পাসপোর্টে বিনা ভিসায় সার্ধশতক উপরে দেশে বেরানো হয়ে গেছে। বিশ্বনেতৃবৃন্দ নামকরা বিখ্যাত তারকা থেকে অজ্ঞাত নাম গোত্রহীন কেউ বাদ যায় নি। নারী শিশু বৃদ্ধ সবাই করোনার শিকার। বলা যায় করোনার কারণে পুরো বিশ্ব এক ভাষা এক দেশে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন-ইরান যুদ্ধের দামামা ও বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা ধনী দেশ গরীব দেশ সবাইকেই সমান তালে সামলাচ্ছে। যে সব দেশের জনগন সারা বছর হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে চলেন তাদের যেমন ধরেছে আবার এর উল্টোপিঠ ও দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশেও শেষ পর্যন্ত কি হয় সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

👮‍♀️করোনা এবং খাদ্য গুদামজাত :
করোনার ভয়ে পয়সা দিয়ে খাদ্য কিনে গুদাম জাত করার দৃশ্য দেখে আমি রীতিমত অবাক। যিনি এ ভিডিও ক্লিপটি আপলোড করেছেন তিনিও লিখেছেন ক্যাপশনে- এরাই আসল ভাইরাস। যদি সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় তখন কি হবে? তবে অনেক শহর যাদুর শহরের মতো ভূতের শহরের রূপ নিয়েছে ইতিমধ্যে। হবেই বা না কোনো?
তবে আমি গতকাল ঢাকায় একটি সুপার স্টোরে গেলে দেখতে পাই- একজন জোরে জোরে বলছে, একটু পর কিছু পাবেন না, যা কেনার কিনে ফেলেন । কিন্তু কাউকেই এ অপপ্রচারে শামিল হতে দেখিনি।

🍔শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আবার কক্সবাজারে তিল ধারনের ঠাঁই নাই:
এ উপসর্গের ব্যাপারে নানা জনের নানা মত। যে আতঙ্কের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ হলো, সেই বাঙালি আবার সহসাই সাহস সঞ্চয় করে কক্সবাজার গেলো।

🗣কোভিড-১৯ মহামারীতে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মীদের ভবিষ্যত:
পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট এর যৌক্তিক ব্যবহার প্রয়োজন নতুবা সামনের দিন গুলোতে কি হবে জানি না। “মানুষের প্রাণ বাঁচাতে নিজের প্রাণদান “- প্রতিটি মহামারীতে এ এক হৃদয় বিদারক চিরন্তন সত্য। ইতিহাসের বড় শিক্ষা, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নিই না।

✈️করোনার অর্থনীতি
শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে…
এয়ারলাইন গুলো ভীষণ ক্ষতির সন্মুখীন । মাঠের খেলা বন্ধ।
সারা বিশ্বেই এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
শেষ পর্যন্ত কি হয় অর্থনীতির -এটাই দেখার বিষয়।

🌈রাখে আল্লাহ মারে কে:
এছাড়া উপায় নাই । পৃথিবীর অনেক দেশেই কর্পোরেট অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। বাড়িতে বসে অনলাইন অফিস করছে। চিকিৎসা দিচ্ছে । আমরা প্রতি রাতেই বিয়ের দাওয়াত খাচ্ছি । গণ পরিবহনের ভীড়ে এখনো ত্রাহি অবস্হা । আল্লাহ না বাঁচালে রক্ষা নেই।

অধ্যাপক ডা: এস এম মোস্তফা জামান
Email: mustafazaman44@gmail.com

Exit mobile version