Site icon Jamuna Television

করোনা পরীক্ষার সুযোগ কতটা?

মাহফুজ মিশু:

বেটার লেইট দেন নেভার। বৃহস্পতিবারেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় বেশকিছু বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইজতেমা মাঠে সন্দেহভাজনদের আলাদা করা সরাসরি বিমানবন্দর থেকে সবচে ভাল সিদ্ধান্ত। আর এই সংকটের সময় সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করাও আস্থা ফেরাচ্ছে জনমানুষের মনে। আর আগে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন, তারা নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছেন কিনা, প্রশাসন সেটি খুঁজতে খানিকটা তৎপর হয়েছেন আগের চেয়ে। এসব উদ্যোগ সবই সতর্কতার জন্য। কিন্তু গেল দু’সপ্তাহে এদেশের মানুষের গা ছাড়া ভাব, সরকারের উদাসীনতা বা অবহেলায় সংক্রমণ যে অনেকটাই ছড়াতে পারে, বিভিন্ন জেলায়, সেই আশংকাও জোরালো হচ্ছে দিনকে দিন। আক্রান্তের ঘোষিত সংখ্যাও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

প্রশ্ন হলো, আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা কত? এই উত্তর কি আসলে আইইডিসিআর দিতে সক্ষম? তারা যে সংখ্যা বলছে, সেটি তো যারা পরীক্ষা করিয়েছেন তাদের মধ্যে। কতজন করিয়েছেন? ৩ থেকে ৪শ জন। ধরেন ৫শ জন। ইউরোপের দেশগুলোর সাথে ফ্লাইট বন্ধের পরও দৈনিক বিদেশ থেকে আসছেন অন্তত ৭ হাজার মানুষ। আর বন্ধের আগে এই সংখ্যা ছিল ১৫ হাজারের বেশি। এসব অংক কেন করছি? করছি কারণ, কেবল ইতালি থেকে আসাদের কত শতাংশকে আমরা পরীক্ষা করতে পেরেছি? ৫ ভাগ, ১০ ভাগ! সম্ভবত না। তার মানে বিদেশ ফেরত, যাদের একটা বড় অংশ ঝুঁকিপূর্ণ, তারা কোভিড ১৯ বহন করছেন কি না, সেটিই আমরা জানি না! আর তাদের মাধ্যমে সংক্রমণের হিসেব আজ তোলা থাক।

প্রশ্ন হলো, এই মানুষগুলো কই? তারা কতজন আলাদা (কেতাবি ভাষায় কেয়ারেনন্টাইন) থেকেছেন? উত্তর বেশিরভাগই থাকেননি। কেউ বিয়ে করেছেন, কেউবা ঘুরতে গেছেন, কেউ আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে বেড়াচ্ছেন! সম্প্রতি প্রশাসন একটু কড়াকড়ি করায় অনেকেই পালিয়েও বেড়াচ্ছেন, মানে নিজ বাড়িতে থাকছেন না! এসব মানুষকে পরীক্ষা করা ভীষণ জরুরি, অন্তত যাদের মধ্যে লক্ষণ, উপসর্গ আছে।

ধরেন, এই লোকগুলো যদি পরীক্ষা করাতে চাইতো, আমরা করতে পারতাম? আমাদের পরীক্ষা করার কীট ছিল? ল্যাব! উত্তর আমাদের জানা। আশার কথা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা করোনা পরীক্ষার কীট তৈরি করেছেন, যা সরকার অনুমোদনও করেছে। স্বাস্হ্য অধিদপ্তরও দাবি করেছে, লাখ খানেক কীট তারা আনছেন বিদেশ থেকে। দু’হাজার নাকি চলেও এসেছে এরই মধ্যে। সুতরাং সামনের দিনগুলোতে কীটের অভাবে পরীক্ষা হবে না বা হচ্ছে না- এমন খবর আমাদের দেখতে হবে না, সেই প্রত্যাশা রইলো।

কিন্তু টেস্ট করাবে কোথায় এত মানুষ? আইইডিসিআর এর ল্যাবেই কেবল পরীক্ষা করানো হচ্ছিল। কারণ বায়োসেফটির ব্যাপারটা এখানে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিএসএল লেভেল তিন ল্যাব লাগবে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য। আইইডিসিআর এর পাশেই বাংলাদেশের আরেক গর্বের প্রতিষ্ঠান উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র – আইসিডিডিআর’বি। তাদেরও এই মানের একটি ল্যাব আছে। সরকার অনুমোদন দিলে নিশ্চয় তারাও এই পরীক্ষায় এগিয়ে আসবে। অণুজীব বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলছেন, বিএসএল লেভেল ২ ল্যাবে এটি পরীক্ষা করা সম্ভব। তাই যদি হয় তবে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন- সিএইচআরএফসহ কয়েকটি ল্যাবকে কাজে লাগাতে পারে সরকার। কিন্তু এগুলো সবই ঢাকাকেন্দ্রিক।

কেউ যদি ভোলা বা কুড়িগ্রাম থেকে এই করোনা টেস্ট করাতে চায়, তার কি হবে? তার পক্ষে ঢাকায় আসা সম্ভব হলেও সেটি তো ভীষণ ঝাঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। তাই অনেকেই চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, রংপুরসহ মেডিকেল কলেজগুলোতে দ্রুততম সময়ে বিদ্যমান ল্যাবকে এই গ্রেডে উন্নীত করার তাগিদ দিচ্ছেন। আবার দেশের বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলেতেও এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে বলতে পারে স্বাস্হ্য মন্ত্রণালয়।

সঠিকভাবে সবার টেস্ট করতে না পারলে হয়তো পরীক্ষা ছাড়াই অনেক মানুষকে মরতে হবে। সংখ্যার বিবেচনায় হয়তো দেশে করোনায় মৃতের পরিমাণ কম হবে কিন্তু জনস্বাস্থ্য তথা জনজীবন দীর্ঘমেয়াদে পড়বে ভীষণ হুমকিতে। তাই সরকারের কাছে আবেদন, বিশেষজ্ঞদের সাথে বসুন। করোনা ভাইরাস পরীক্ষার সুযোগ বাড়ান।

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন।

Exit mobile version