Site icon Jamuna Television

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফের সাজার আদেশে অসঙ্গতি ধরা পড়লো হাইকোর্টে

মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে।

এরপর তার বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে তাকে সাজা দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে দোষস্বীকারোক্তি পত্রে আসামীর নাম দেখানো ‘মো. রফিকুল ইসলাম’। আবার আসামীর বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে ‘মৃতঃ মো. রফিকুল ইসলাম’।

অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত আরিফুল ইসলামকে সাজা দেয়ার যে দাবি জানিয়েছে সেখানে আরিফুল ইসলামের মৃত বাবাকে সাজা দেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা দেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে দায়ের করা রিটের শুনানিতে সোমবার (২৩ মার্চ) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এসব বিষয়ে তুলে ধরা হয়।

আদালতে সাংবাদিক আরিফের পক্ষে শুনানিতে আছেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

শুনানির শুরুতে আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিক আরিফকে সাজা প্রদান সংক্রান্ত নথিপত্রের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন এবং এভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ নথি দিয়ে হাইকোর্টে উপস্থাপন কতটুকু আইনসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক আরিফকে সাজা দেওয়া হয়েছে ১৩ মার্চ, অথচ সাজার কপিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে ১৪ মার্চ। আবার সাজা দেওয়ার আগেই তাকে জেলে পাঠানো হলো, এটা কিভাবে সম্ভব? তিনি বলেন, ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিতে আসামীর নাম এবং পিতার নাম একই লেখা হয় কিভাবে?

জবাবে আদালত বলেন, আমি নিজেও এসব নথি পড়েছি। প্রতিটা শব্দ পড়েছি। অনেক কিছু এখানে অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোনো কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন (ফুট প্রিন্ট) রেখে যায়।

ইশরাত হাসান বলেন, স্বীকারোক্তিতে আসামী আর বাবার নাম একই। সেখানে আসামীর নাম নেই। তাহলে কেন তাকে সাজা দেয়া হবে? তাহলে আরিফ তো সেই ব্যাক্তি না। এমনকি স্বীকারোক্তিতে আরিফের কি অপরাধ তারও কোন বর্ণনা নেই। এরপরও এ মামলায় আর কি থাকতে পারে?

ইশরাত হাসান বলেন, এ মামলায় এখন যদি নতুন করে আর কোন নথি আসে তাহলে তার দ্বারা আদালত মিস লিড হতে পারে। অ্যাটর্নি জেনারেল এই বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেছেন, বাড়ি থেকে ধরে তুলে নিয়ে সাজা দেওয়া আইনসম্মত নয়।

তিনি বলেন, এছাড়াও দুজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে একই বক্তব্য দিয়েছেন। আবার মদ ও গাজা একসাথে খাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একসাথে মদ ও গাজা কিভাবে খাওয়া যেতে পারে? এমনকি ঠিকানাও টেম্পারিং করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত মদ খাওয়ার অপরাধে সাজা দিয়েছে। কিন্তু গাজার অপরাধে সাজা দেয়নি। তাহলে গাজা কোথায় গেলো?

তিনি আরও বলেন, এ মামলায় প্রতিটি বিষয় সাজানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় এমন কোন জায়গা নেই যেখানে আরিফের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘণ হয়নি।

আইনজীবীর শুনানি শেষ হলে আদালত বলেন, যেহেতু তিনি (সাংবাদিক আরিফ) হাইকোর্টে এসেছেন। সেহেতু তিনি পিটিশনার হলে ভালো হবে। আপনারা তাকে পিটিশনার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করুন। আমরা আদেশ দিতে চাই, নইলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে।

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, উনার (সাংবাদিক আরিফ) হাত ভাঙ্গা। তখন আদালত বলেন, প্রয়োজনে উনি টিপসই দিয়ে মামলার পিটিশনে স্বাক্ষর করুক। আমরা বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছি। এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা মামলাটি শুনতে চাই।

Exit mobile version