Site icon Jamuna Television

করোনায় নয় ভয়, সড়কেও মৃত্যু থামাই

শাকিল হাসান:

করোনাভাইরাস আক্রমণ হেনেছে বাংলাদেশেও। ভাইরাসের বিস্তার রোধে দশ দিনের লম্বা ছুটি দেয়া হয়েছে। যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। ঘরে থাকতে বলা হয়েছে মানুষদের। নতুন হাসপাতাল, চিকিৎসক, নার্সদের প্রস্তুত করা হচ্ছে। টেস্টিং কিট ও পিপিই’র ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকার করোনাভাইরাসের কারণে রফতানিমূখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতনের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। গরীবদের জন্য দশ টাকা কেজি চালের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রণোদনাও ঘোষণা করেছে। প্রশাসনযন্ত্রকে সক্রিয় করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বহিনীও তৎপর। মাঠে নামানো হয়েছে সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীকেও। চারিদিকে সাজসাজ রব। করোনা মোকাবেলায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থাই বটে। জনগণ এই আয়োজনের বাস্তবায়নও দেখতে চায়।

বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম শনাক্ত হয় কোভিড-১৯। এরপর থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত আক্রান্ত ৩৯ জন। আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। অথচ আজই (শনিবার) ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক উল্টে ৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১০ জন। গত বুধবার বগুড়ার শেরপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে আরও ৬ জন। ১৪ মার্চ বাগেরহাটের কাকডাঙ্গায় ৫ জন। ১ মার্চ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ৫ জন।
এই ১৮ দিনেই দেশের বিভিন্ন স্থানে কত সড়ক দুর্ঘটনার হয়েছে তার হিসেব কে রাখে?

বুয়েটের সড়ক দূর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রতিবেদন হিসেবে দৈনিক গড়ে ২০ জন হিসেবে ধরলেও মারা গেছেন কমপক্ষে ৩৬০ জন। আহত নিশ্চিতভাবেই এর তিন-চার গুণ। আর আর্থিক ক্ষতি পরিমাপ করা দুঃসাধ্য হলেও একটা আন্দাজ করা যায়। যেমন যারা নিহত বা আহত হয়েছেন তারা বেঁচে থাকলে কী পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতেন বা তাদের পরিবারগুলো যে ক্ষতির সম্মুখীন হলো এসব বিবেচনায় নিলে ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউট (এরআরআই) এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিত’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত ২০১৫ থেকে ২০১৮’র জুন পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২৫ হাজার ১২০ জন। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২০ জন। এই সময়ে আহত হয়েছেন ৬২ হাজার ৪৮২ জন। এসব দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশ ঘটেছে চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও অতিরিক্ত গতির কারণে। এছাড়া, আরো আছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, সড়ক নির্মাণে ত্রুটি, সড়ক ঘিরে হাট-বাজার, ট্রাফিক আইন না মানা, ওভারটেকিং। তো এসব এসব সমস্যা সমাধানে কেন সাজসাজ রব দেখা যায় না? নাকি সড়কে মৃত্যুর মিছিলই নিয়তি?

‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ২০১৯ সালে আগের বছরের চেয়ে দুর্ঘটনায় বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। সেই সংখ্যাটাও ৭৮৮ জন। প্রতিবছরই বাড়ছে সড়কে মৃত্যু। যে ব্যবস্থাগুলো নিলে সড়কে মৃত্যুহার কমানো যায় সেসব চাইলে সরকার খুব সহজেই নিতে পারে। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে। শুধু দরকার আন্তরিকতা আর উদ্যোগ। কিন্তু বছর, যুগ পার হলেও এখানেই কেন যেন ঘাটতি। কিছু উদ্যোগ যখন মানুষকে আশান্বিত করে তারপরই আবার হোঁচট।

বানানীতে স্কুল শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন চললো তার ঢেউয়ে আইন তৈরির মতো দৃশ্যমান কিছু কাজ হয়েছে বটে কিন্তু সড়কে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফেরেনি। সাধারণ মানুষও খানিকটা সচেতন হয়েছিল। ফুটপাথ ধরে হাঁটা, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তারপর আবারো একই চিত্র! কিন্তু একদিন পুরোপুরি ফিরবে আশা করাই যায়। করোনা মোকাবেলায় সরকার যেমন সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন তেমনি সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামাতেও সরকার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করুক। পথচারীরা এখন যেমন করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক পরে হাঁটছেন তেমনি যেখানে সেখানে সড়ক পার না হয়ে তিনি জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হবেন এমন আশা করাই যেতে পারে।

লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার, যমুনা টেলিভিশন।

Exit mobile version