Site icon Jamuna Television

চরম আর্থিক মন্দার দিকে গোটা বিশ্ব: আইএমএফ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে দেশে চলছে লকডাউন, ক্ষেত্র বিশেষে কারফিউ। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় সামনের দিনগুলোতে মহা সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিয়া জর্জিয়েভা বলেছেন, আমরা একটি অর্থনৈতিক মন্দায় প্রবেশ করেছি। বিশ্ব চরম আর্থিক মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

শুক্রবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ প্রধান জর্জিয়েভা বলেন, এটা ২০০৯ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার চেয়েও কঠিন হবে। তিনি বলেন, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস বন্ধ। গাড়ির চাকা ঘুরছে না। আকাশে উড়ছে না বিমান। এক কথায় গোটা বিশ্ব স্থবির হয়ে আছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির চেয়েও করোনার অর্থনৈতিক বিপদ আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

৭ লাখ কোটি ডলারের পরিকল্পনা : করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা মোকাবেলায় বিশ্বনেতারা সাত লাখ কোটি ডলারের বেশি খরচের পরিকল্পনা করেছেন। এর মধ্যে অর্থ সাহায্য, ঋণ প্রদান, কর মওকুফ এবং দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নতুন নোট ছাপানোর মতো বিষয়ও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, চীন ও ভারত সরকার ধারণা করেছে এ খরচের পরিমাণ আরও বাড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রে দুই ট্রিলিয়ন (দুই লাখ কোটি) ডলারের বিল পাস হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে পাস হওয়া সবচেয়ে বড় অঙ্কের বিল এটি। মহামারীতে চাকরি হারানো কর্মী ও ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য এ অর্থ ব্যয় করা হবে। যুক্তরাজ্য সরকার ঋণ নিশ্চয়তা ও স্থানীয় ব্যবসায় কর স্থগিতের মাধ্যমে ৩৩০ বিলিয়ন ডলার খরচের পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া মাসে ২ হাজার ৯০০ ডলার পর্যন্ত বেতন পাওয়া কর্মীদের আগামী ৩ মাস তাদের বেতনের ৮০ ভাগ সরকারের তরফ থেকে বহন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি তাদের হাতে থাকা যুক্তরাজ্য সরকার ও কর্পোরেট বন্ডের পরিমাণ ২৪২ বিলিয়ন ডলার বাড়াবে। জার্মান সরকার ৮২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে ঋণ প্রদানসহ সরাসরি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অংশীদার হওয়ার বিষয়ও রয়েছে। ফরাসি সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বেকার কর্মীদের ৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়ার কথা জানিয়েছে। এছাড়া দেশটি কর্পোরেট ঋণগ্রহীতাদের জন্য ৩৩০ বিলিয়ন ডলারের নিশ্চয়তা দিয়েছে। ইতালি নিজের দেশের শ্রমিকদের এবং স্বাস্থ্য খাতে ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের কথা জানিয়েছে। স্পেনও ২২০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮২৪ বিলিয়ন ডলার দেয়ার কথা বলেছে, যা দিয়ে সংস্থাভুক্ত দেশগুলোকে ঋণের সুবিধা দেয়া হবে। চীন এখন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থ-সহায়তা ঘোষণা করেছে, এরমধ্যে কর ও শুল্ক কমানোর বিষয় রয়েছে। জাপান সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য নগদ সহায়তাসহ বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আর্থিক মূল্য হতে পারে প্রায় ২৭৪ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারতে লকডাউন ঘোষণার ৩৬ ঘণ্টা পর ২২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা, খাদ্য-সহায়তাসহ শ্রমিকদের আর্থিক সুবিধা দেয়ার বিষয় রয়েছে। যে কোনো মূল্যে কোভিড-১৯-এর বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ২০ অর্থনীতির দেশের নেতারা।

Exit mobile version