Site icon Jamuna Television

করোনার বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান অস্ত্র হ্যান্ড স্যানিটাইজারের জননী এই নারী

বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছে করোনাভাইরাস। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের অন্যতম অনুষঙ্গ হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কয়েক মাস আগেও নির্মাতা সংস্থা বা বিক্রেতারা ভাবতে পারেননি, রাতারাতি এর চাহিদা আকাশছোঁয়া হয়ে যাবে। এখন স্যানিটাইজার সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ, ৫০ বছর আগেও ছিল না এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার নামক জিনিসটির অস্তিত্ব। লুপি হার্নান্ডেজ নামক এক লাতিন আমেরিকান তরুণীর ভাবনা থেকেই আজকের হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

বলা বাহুল্য, আগে হাত পরিষ্কার রাখার জন্য মানুষের প্রধান ভরসা ছিল সাবান-পানি। কিন্তু হাসপাতালের কাজের মধ্যে সবসময় সাবান আর জল দিয়ে হাত পরিষ্কার সম্ভব হচ্ছিল না নার্সিংয়ের ছাত্রী লুপির। তিনি ভাবছিলেন, এমন কিছু একটা তৈরি করতে যেটা দিয়ে নিমেষেই হাত পরিষ্কার করে নেওয়া যায়। পানি বা সাবান অপ্রতুল হলেও ব্যস্ততার মধ্যে যেন জীবাণুমুক্ত করা যায় হাত।

১৯৬৬ সালে লুপি আমেরিকার বেকার্সফিল্ড শহরে নার্সিংয়ের ছাত্রী ছিলেন। আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে লস অ্যাঞ্জেলস থেকে ১০০ মাইল উত্তরে বেকার্সফিল্ড শহরের নামকরণ কর্নেল টমাস বেকারের নামে। উনিশ শতকে তিনি এই অঞ্চলে বসতি শুরু করেছিলেন। জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কৃষিতে সমৃদ্ধ এই শহরেই আবিষ্কৃত হয়েছিল স্যানিটাইজার। যাকে আজকের বাস্তবতার বিচারে বৈপ্লবিক আবিষ্কার বলাই যায়।

লুপির মনে হয়েছিল, হাতের কাছে সাবান এবং গরম জল না থাকলে তার বিকল্প হতে পারে অ্যালকোহল। তার মাথায় আসে, যদি অ্যালকোহলকে জেল-এর মতো করে প্রক্রিয়াজাত করা যায়, তাহলে কেমন হয়?

নিজের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে তিনি যোগাযোগ করেন পেটেন্টের ব্যাপারে সাহায্য করে এমন একটি সংস্থার সাথে। টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে তিনি তাদের সন্ধান পেয়েছিলেন। তাদের মাধ্যমেই পেটেন্ট নথিভুক্ত করেন লুপি। তারপর বাস্তবে রূপ দেন তার ভাবনাকে। চুয়ান্ন বছর আগে লুপি ভাবতেও পারার কথা নয় তার আবিষ্কার একদিন জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মানুষের অন্যতম প্রধান অস্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হবে। লুপির এই আবিষ্কারের পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার মূলত ছিল ডাক্তার, নার্সসহ জনস্বাস্থ্য বিভাগ সংক্রান্ত লোকজনের ব্যবহার্য জিনিস ছিল।

ক্রমে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের প্রচলন শুরু হয় মার্কিন সেনাবিভাগে। আমেরিকা ও ইউরোপে আমজনতার মধ্যে এর ব্যবহার দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায় ২০০৯-এ। এইচ-ওয়ান এন-ওয়ান সংক্রান্ত মহামারির সময়।

করোনাভাইরাসে মহামারি রূপ ধারণ করার আগে শহরের নির্দিষ্ট শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যেই সীমিত ছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার। এখন তো এটি ঘরে ঘরে স্থান করে নিয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলেন, জীবাণুমুক্ত করার বিষয়ে যেকোনও সাবানই কার্যকর। কিন্তু পানি ছাড়া তো আর সাবান ব্যবহারের উপায় নেই। তাই যেখানে পানি নেই সেখানে নার্সিংয়ে ছাত্রী লুপির আবিষ্কারই করোনার বিরুদ্ধে মানুষের প্রধান অস্ত্র।

Exit mobile version