Site icon Jamuna Television

তাপমাত্রার সঙ্গে করোনাভাইরাসের সম্পর্ক আছে কী?

অনেকেই আশাবাদী এই কারণে যে পূর্বের অভিজ্ঞতা ও গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভাইরাস সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রায় বিস্তার করতে পারে না। করোনা যেসব দেশে বেশী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে সেসব দেশে কম তাপমাত্রা চলছিল বা চলছে।

কিন্তু এই ভাইরাসটি একেবারেই নতুন। আর সেই কারণে বিজ্ঞানীরা প্রথমে এর নাম দিয়েছিলেন নোভেল, পরবর্তীতে নামকরন বদলে হয় কোভিড-১৯ আর রোগের নাম হয় সার্চ-কোভ ২ ।

কেন এই নাম দেওয়া হলো প্রশ্নটি মাথায় আসতেই পারে, আসাটাই স্বাভাবিক। করোনা পরিবারের দ্বারা আক্রান্ত যে রোগ ইতিমধ্যে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিল তার প্রথমটির নাম ছিল সার্চ-কোভ, তাই কাছাকাছি লক্ষণের কারণে দ্বিতীয়টির নাম দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, যেহেতু সময় অনেক গড়িয়েছে, তাই প্রথমটি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা হয়ে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয়টি এমনভাবে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়েছে যে গবেষণা এখনও সম্পূর্ণ করা সম্ভব হয়নি কোনও দেশের পক্ষে।

সার্চ-কোভ আর সার্চ-কোভ ২ এর মাঝে বেশ কয়েকটি জায়গায়, আবার অমিলও রয়েছে। প্রথমটিতে আক্রান্তের সময় মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল প্রথম থেকেই। দ্বিতীয়টির সংখ্যা ইদানিংকালে বাড়ছে তাও কয়েকটি দেশের হিসাবের প্রেক্ষাপটে।

প্রথমটি শুধুমাত্র লক্ষণ যারা প্রকাশ করেছিল তাদের দ্বারা ছড়িয়েছিল; কিন্তু দ্বিতীয়টি করেছে সর্বনাশ। লক্ষণ প্রকাশ না করলেও ছড়াচ্ছে। আর এতেই হিসাবেই গণ্ডগোল।

যেকোনো ভাইরাসের শত্রু হলো তিনটি- সূর্য, তাপমাত্রা ও আদ্রতা পরিমাণ। দিনের বেলায় ভাইরাস যেখানে আড়াই মিনিটের বেশী কার্যকর থাকতে পারে না সেখানে রাতের বেলায় কার্যকর থাকে ১৩ মিনিটের মত। মানে অধিক সময় কার্যকরী বিধায় বংশ বিস্তারের সুযোগ বেশি তৈরি করতে সক্ষম।

তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রির বেশি আর আদ্রতা ৯৫% এর বেশি হলে ভাইরাস কার্যকর থাকে না। এইসব জিনিস মাথায় রেখেই অনেকেই আশা ব্যক্ত করছেন যেসব দেশে গরম শুরু হয়ে গেছে তারা বেঁচে গেল! ঘটনা এতটুকু থাকলে তো ভালোই হত অনেক দেশের জন্য। ইন্দোনেশিয়া, মালয়শিয়াসহ অনেক দেশে ভাইরাসবিরোধী তিনটি জিনিস থাকা সত্ত্বেও রোগ ছড়াচ্ছে। এর কারণ কী?

প্রথম কারণ হলো রোগের লক্ষণ না থাকলেও অনেকেই আরেকজনকে ভাইরাস দিয়ে দিচ্ছেন, দ্বিতীয় হলো আমরা তো সবসময় ঘরের বাইরে থাকি না। ঘরের তাপমাত্রা তো ভাইরাস উপযোগী হয়ে থাকে বেশীরভাগ সময় এসি, ভারী পর্দা, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে অনেক ঘরে আলোটাও প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ভাইরাস তো টিকে যাচ্ছে। আর মানুষের শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা তো ভাইরাসে জন্য সবসময় উপযোগী। তাই রোগ সুনির্দিষ্ট দেশে সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে ২০৩টি দেশে। সব দেশ তো শীতপ্রধান নয়।

তাই বিজ্ঞানীরা বারবার সাবধান করছেন যেন একে অবহেলা না করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট। আর বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রটেকশন, প্রটেকশন, আর প্রটেকশন। ঘরে থাকি বা বাইরে, নিরাপত্তার বিকল্প নেই।

সড়কের নিরাপত্তার মত বিষয়টা, আমি নিরাপদে গাড়ি চালালেই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয় সবাইকেই নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে।

লেখক: ডা. আশরাফুল হক
ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট, ঢাকা।

Exit mobile version