Site icon Jamuna Television

করোনা আতঙ্কে চা শ্রমিকরা; পাননি ছুটি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সবাইকে ঘরে থাকার সরকারি ঘোষণা থাকলেও কাজ করে যাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলো চলছে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। ছুটি না থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে নিজ থেকেই কাজ বন্ধ করেছেন অনেক শ্রমিক। মজুরিসহ ছুটির দাবিতে জেলার বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালনও করছেন।

ধর্মঘটর বিষয়ে চা বাগান সংশ্লিষ্ঠরা জানান, চা-শ্রমিকদের ছুটি না হওয়ায় জেলার অনেক শ্রমিকরা নিজ থেকে কাজে যাচ্ছেন না। যার কারণে জেলায় অন্তত ৩০টি চা বাগান বন্ধ হয়ে গেছে। ছুটির দাবিতে অন্যান্য বাগানগুলোতে ধর্মঘট পালন করছে শ্রমিকরা। তবে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাগানের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান তারা। যেসব শ্রমিকরা কাজে আসেননি তাদের অনুপস্থিত হিসেবেই মূল্যায়ন করবে ম্যানেজমেন্ট।

তারা আরো জানান, চা বাগানের কর্মক্ষেত্রটা ভিন্ন। শ্রমিকরা বাগানে কাজে গেলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কম। কারণ তখন তারা বাগানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকেন। এখন বাগানে চলছে চা গাছে পানি সরবরাহ করা। বাগান বন্ধ হলে পানির অভাবে রুগ্ন চা গাছগুলো মারা যাবে। এই অবস্থায় শ্রমিকরা যদি কাজ বন্ধ রাখে তাহলে চা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যহত হবে। এছাড়া শ্রমিকদের কাজ না থাকলে তারা সবাই একত্রিত হয়ে থাকবে। এতে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিরও সম্ভাবনা রয়েছে।

সরেজমিন চা বাগানের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা কোন ধরণের সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই টিলা ও সেকশনে কাজ করছেন। মাস্ক, গ্লাভস নেই। সেখানে ঘনঘন হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাত ধোয়ার জন্য কোম্পানি সাবান ও পানির ব্যবস্থা করেছে। একই চিত্র লেবার লাইনগুলোতেও। নিজ নিজ বাসগৃহে গাঁ ঘেষোঘেষি করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে তাদের বসবাস।

শ্রমিকরা জানায়, দেশের অন্য পেশার মানুষ নিরাপদে ঘরে আছেন। কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক সবার মধ্যে বিরাজ করছে। ছুটি না পেয়ে বিভিন্ন চা বাগানে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

তাছাড়া চা বাগানগুলোতে স্বাস্থ্যসুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। সচেতনতার সংকট আছে শ্রমিকদের মধ্যে। তবে এ পর্যন্ত চা বাগানগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি কেউ। সেক্ষেত্রে বাগানে কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ অবস্থায় নিজেরা নিরাপদ থাকতে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর, কানিহাটি, দেওছড়া, বাঘিছড়া, ডবলছড়া ও মিরতিংগা চা বাগানে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে সেই সংখ্যা। একই চিত্র শ্রীমঙ্গলসহ অন্যান্য উপজেলার অনেক চা বাগানে।

চা বাগান মালিকপক্ষের সংগঠন ‘বাংলাদেশীয় চা সংসদ’ এর সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান ও ফিনলে টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বলেন, সরকার ঘোষিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে ওষুধ, খাদ্য প্রস্তুত, ক্রয়-বিক্রয়সহ অন্যান্য শিল্পকারখানা ও প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে। সেই মোতাবেক আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চা বাগানের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা বাগানের চা-শ্রমিকদের মধ্যে নতুন ঘর তৈরিসহ পুরাতন ঘরগুলোও সংস্কার করে দিচ্ছি। যাতে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে তাদের কষ্ট পেতে না হয়। হঠাৎ ছুটি ঘোষণা করা হলে এ কাজগুলো আটকে যাবে। আমাদের চা বাগানে কয়েক হাজার ক্যাজুয়্যাল (অস্থায়ী) শ্রমিক কাজ করে। চা বাগান বন্ধ হলে এ অস্থায়ী শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। তখন তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা চা বাগানের ভেতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক জোরদার করেছি। বাইরে থেকে কাউকে বাগানের ভেতরে প্রবশের সুযোগ দিচ্ছি না। আবার বাগান থেকেও বাইরে বের হবার ক্ষেত্রে সতর্কতা আরোপ করা হয়েছে। যাতে খুব প্রয়োজন না হলে কেউ বাগানের বাইরে না যান।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাম ভজন কৈরী জানান, মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানের প্রায় সাড়ে তিন লাখ চা জনগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন। এরমধ্যে চা বাগানে নিয়মিত অনিয়মিতভাবে কাজ করেন এমন শ্রমিক প্রায় এক লাখ।

সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি তাদের ক্ষেত্রে কার্যকর হয়নি। চা শ্রমিকদের সরকারি ছুটির অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানিয়ে চা সংসদে লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, চা শ্রমিকদের সুরক্ষায় আমরা গুরুত্বসহকারে কাজ করে যাচ্ছি। এরমধ্যে চা বাগানগুলোতে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জেলার সব চা বাগানে মদের পাট্টা বন্ধ এবং চা বাগানে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চা বাগানগুলো নিজ ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থার মাধ্যমে বাগান পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে।

Exit mobile version