Site icon Jamuna Television

করোনা: কী হবে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার

যুদ্ধ ও মহামারী মধ্যপ্রাচ্যের নিত্যসঙ্গী। এ অঞ্চলে আবারও এক প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারী তাণ্ডব চালাচ্ছে। ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাবা বসাচ্ছে করোনা। এ ভাইরাস মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক নয়া ‘টাইম বোমা’। এ অঞ্চলের কোনো কোনো দেশ করোনা মোকাবেলায় প্রস্তুত নয়। আবার কারও নেই প্রতিরোধ সক্ষমতা। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। সবচেয়ে বাজে অবস্থা প্রায় এক দশক ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার। দেশটির ৬৪ শতাংশ সরকারি হাসপাতাল অকেজো। এগুলো নতুন করে সচল করার চেষ্টা চলছে। সিরিয়ায় প্রায় ৬০ লাখ শরণার্থীর বাস। করোনা সংক্রমণ শুরু হতে থাকলে সেখানে শরণার্থী শিবিরগুলোতে দাবানলের মতো ভাইরাস ছড়াতে থাকবে বলে হুশিয়ারি দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

রয়টার্স লিখেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার ইদলিব ধ্বংসস্তূপের নগরী। কোথাও সাবান নেই, অনেক কষ্টে মেলে সামান্য পানি। গোলার আঘাতে গুঁড়িয়ে যাওয়া নগরীতে কোয়ারান্টিনের জায়গাও নেই। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস সেখানে নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ লাখ জনসংখ্যার ইদলিবে গত সপ্তাহে দেড় হাজার টেস্ট কিট পৌঁছেছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনা এখনও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে পৌঁছায়নি। যদিও ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে। সিরিয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটিতে পাঁচজন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছে। সিরিয়া যুদ্ধে বাস্তুহারা হয়েছেন ৬১ লাখ মানুষ এবং প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে শরণার্থী হয়েছেন আরও ৫৩ লাখ। সিরিয়ার আল-হোল শরণার্থী শিবিরে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৭ হাজার ৫৭০ জনের বসবাস। ওই শিবিরে ৫ বছর ধরে রয়েছেন নায়েফ আল আহমদ। তিনি বলেন, ‘পানির তীব্র সংকট হওয়ায় আমরা ভালোভাবে হাতই ধুতে পারি না।’ ইদলিবে যুদ্ধবিরতি চলছে। গত কয়েক সপ্তাহে সেখানকার মানুষ বাশার আল-আসাদ বাহিনী বা তাদের মিত্র রুশ বাহিনীর বোমা হামলার আতঙ্কে নয় বরং করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গত বছর ডিসেম্বরে আসাদ বাহিনী ইদলিবে আক্রমণ করলে নগরীর ১০ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। যারা এখন নানা অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাস করছেন। ক্যাম্পগুলোতে হাজার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে থাকেন, খান, ঘুমান। সেখানে বারবার হাত ধোয়া বা দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। কোয়ারেন্টিনের তো প্রশ্নই আসে না। ইদলিবে নারীদের সহযোগিতা ও কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করছেন হুদা খাইতি। তিনি কোভিড-১৯ রোগের বিষয়ে সচেতনতা কমিটিরও প্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি কিভাবে এদের বলি আপনারা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। তারা ভাগ্য ভালো থাকলে পরিষ্কার পানি পান। হাজারও মানুষের জন্য মাত্র কয়েকটি টয়লেট। মাস্ক, গ্লাভস কিচ্ছু নেই।’ বছরের পর বছর চলমান যুদ্ধে ইদলিবের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। শুধু ২০১৯ সালেই সেনা অভিযানে ৮৫টি হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। মেডিকো ইন্টারন্যাশনালের সিরিয়াবিষয়ক সমন্বয়ক তিল কুস্তা বলেন, সেখানে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের জন্য মাত্র তিনটি হাসপাতাল আছে। তার মধ্যে মাত্র একটি চালু। সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে ১৫০টি করে শয্যা এবং ভেন্টিলেটর আছে বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

Exit mobile version