Site icon Jamuna Television

করোনা-পরবর্তী বিশ্বে কি টিকে থাকবে হ্যান্ডশেক?

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়েই মানুষকে এখন হাজার বছর ধরে চলে আসা সামাজিক রীতি বাদ দেয়ার চিন্তা করতে হচ্ছে। এসবের মধ্যে হ্যান্ডশেক বা করমর্দনের চর্চার ওপরই মহামারী পরবর্তী বিশ্বে সবচেয়ে বড় ধরনের খড়্গ পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিবিসির এক নিবন্ধে এ হাত মেলানোর রীতির বেশকিছু বিকল্পের সন্ধানও দেয়া হয়েছে। হাত মিলিয়ে এতদিন বন্ধুরা একে অপরকে সম্ভাষণ জানিয়েছেন, অপরিচিতদের মধ্যে হৃদ্যতা বেড়েছে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে হয়েছে শত শত কোটি টাকার চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা।

হ্যান্ডশেকের চল কীভাবে শুরু হয়েছে, তা নিয়েও আছে নানান মত। অনেকের ধারণা, এটি শুরু হয়েছে প্রাচীন গ্রিসে। দুই ব্যক্তি নিজেদের কাছে কোনো অস্ত্র নেই বোঝাতে একে অপরের সঙ্গে হাত মেলাতেন। কারও কারও হিসেবে হ্যান্ডশেকের চল শুরু হয় মধ্যযুগের ইউরোপে। নাইটরা তখন লুকানো অস্ত্রের সন্ধানে সন্দেহভাজনদের হাত ধরে ঝাঁকাতেন। ‘হ্যান্ডশেক হচ্ছে মানুষে মানুষে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার আক্ষরিক অঙ্গভঙ্গি; মানুষ কীভাবে গভীর সামাজিক

ও স্পর্শকাতর প্রাণী হিসেবে বিকশিত হয়েছে তার প্রতীক, বলেছেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ক্রিস্টিন লেগারে। কয়েক হাজার বছর ধরে চলে আসা এ হাত মেলানোর অভ্যাস সহজে থামানো যাবে না বলেও মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘বিকল্প হিসেবে কনুই মেলানোর কথা আসায় আমরা বুঝতেই পারছি যে, স্পর্শ আমাদের কাছে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।’

অনেকের সংস্কৃতিতে মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে নিজের দুই হাতের তালু চেপে ধরে অপরকে সম্ভাষণ জানানোর চল আছে। হিন্দু রীতির ‘নমস্কার’ তো করোনার প্রথম থেকেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভ্রু উঁচিয়ে ‘আইব্রো ফ্ল্যাশ’ আর হাস্যমুখের সামোয়ান চর্চা কিংবা কিছু মুসলিম দেশে হাত নিজের বুকের ওপর রেখে শ্রদ্ধা জানানোর নিয়মও রয়েছে। আছে হাওয়াইয়ের ‘শাকা সাইন’, যাতে মাঝের তিন আঙুল নিচের দিকে বাঁকিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুল ও কনিষ্ঠা প্রশস্ত করে হাত ঝাঁকিয়ে স্বাগত জানানো যায়।

কেবল এবারই প্রথম মানুষে মানুষে স্পর্শকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, তা নয়। গত শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেক মনোবিজ্ঞানী শিশুদের প্রতি স্নেহ দেখানোকে ‘অহেতুক আবেগ’ বলে অভিহিত করতেন।

Exit mobile version