Site icon Jamuna Television

চোর‌ ছে‌ড়ে দি‌য়ে গরু বি‌ক্রির অভিযোগ ইউ‌পি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

জনসমাগম করে গরু চোরের বিচার-শালিস করছেন ইকবাল মাহামুদ লিটন

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় গরু চোর সন্দেহে আটক হওয়া ৬/৭জন যুবককে পুলিশে সোপর্দ না ক‌রে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে দশমিনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল মাহামুদ লিটনের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও আটক হওয়া চোর চক্রের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া দুইটি গরু মালিককে ফেরত না দিয়ে বিক্রির টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন- এমনও অ‌ভি‌যোগ পাওয়া গে‌ছে। সেইসাথে চলমান করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে বিশাল জনসমাগম করে গরু চোরের বিচার-শালিস করে আলোচনায় এই নেতা। বিষয়‌টি গোটা জেলায় আ‌লোচনায় উ‌ঠে এসে‌ছে।

স্থানীয় সূ‌ত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলার চরহাদি এলাকায় গত ১২ মে গরু-মহিষ চোর সন্দেহে চরহাদির এলাকার বাসিন্দা মতিউর মাতব্বরের ছেলে খোকন মাতব্বর (২৮) ও জাহিদ মাতব্বর (২৫), মোসলেম মৃধার ছেলে সাখাওয়াত মৃধা (২৪), রাজ্জাক মৃধার ছেলে সাইফুল মৃধা ও চন্দন খলিফার ছেলে সোহেল খলিফা (২৮), জুলহাস গাজী এবং শহিদুল খলিফাসহ ৭/৮ জনকে আটক করে স্থানীয়রা। প‌রে ওই যুবকদের কাছ থেকে দুইটি গরু এবং ৫টি মহিষ জব্দ করে স্থানীয়রা।

আটকের বিষয়টি দশমিনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহামুদ লিটনকে জানা‌লে লিটন ওই চক্রকে পুলিশে সোপর্দ না করার পরামর্শ দিয়ে নিজেই বিচার করে ঝামেলা মিটিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন। লিটনের পরামর্শে স্থানীয়রা ওই যুবকদের দক্ষিনপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে আটকে রাখে। দফায় দফায় ওই যুবকদের মারধোরও করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

প‌রে পূর্বে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গত বুধবার ওই এলাকার আলাউদ্দিন মিস্ত্রীর বাড়ির আঙিনায় বিচার-শালিস বসায় আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল মাহামুদ লিটন। স্থানীয়দের ধারণ করা একটি চিত্রে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতি না মেনে ওই আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতিতে অন্তত সহস্রাধিক লোকের উপস্থিতি ঘটে। মধ্যযুগীয় ভাবে এ শালিসির এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগ এই নেতা আটককৃত চোরদের ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এসময় উপস্থিত অনেকেই চোরদের পুলিশে সোপর্দ করার দাবি জানায়। কিন্তু লিটনের দাপটে তারা নিরব থাকতে বাধ্য হন বলে জানা যায়। ওই শালিসিতে লিটন অভিযুক্তদের এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। যা চেয়ারম্যানের কাছে দিতে বলা হয়েছে।

আটক হওয়া সাইফুলের পিতা রাজ্জাক মৃধা জানায়, তার ছেলেকে থানা পুলিশ এবং মারধোরের ভয় দেখিয়ে ৪৬ হাজার টাকা নিয়েছে চেরয়াম্যানের লোকজন। এছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান লিটনের স্নেহধন্য আলাউদ্দিন মিস্ত্রী, হিরন, ইব্রাহীম আকন সোহেল গং আটককৃত যুবকদের পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দেয়ার চুক্তিতে খোকনের পিতা মতি মাতব্বরের কাছ থেকে পৌনে দুই লাখ, সোহেল খলিফার কাছ থেকে ৭০ হাজার, সোহরাফ প্যাদার কাছ থেকে ৩২ হাজার, তুহিন মৃধার কাছ থেকে ৩৫ হাজার সাখাওয়াতের কাছ ৬০ হাজার, লাল মিয়া বেপারীর কাছ থেকে ৩৫ হাজার এবং শহিদুল খলিফার কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

এ প্রসঙ্গে চোর সন্দেহে আটক হওয়া খোকন জানায়, আমাকে চোর সন্দেহে আটক করে স্কুলে দুই দিন আটক রাখা হয়। পরে দশমিনা চেয়ারম্যান সাহেব শালিস করে। টাকা দিয়ে আমার পিতা তাদের কাছ থেকে আমাকে ছাড়িয়ে আনে। তবে কত টাকা দিচ্ছে তা আব্বায় জানে।

চোরাই হওয়া মহিষের মালিক রাঙ্গাবালী উপজেলার বাসিন্দা আক্কাস চৌকিদার জানায়, তার চুরি হওয়া ৫টি মহিষের মধ্য দুইটি মহিষ চেয়ারম্যানের লোকজনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। বাকি তিনটি ফেরত দেয়নি চেয়ারম্যানের লোকজন। এ প্রসঙ্গে আলাউদ্দিন মিস্ত্রী জানায়, দশমিনা উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা লিটন ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে তাদের কাছে রাখা চোরাই গরু দুইটি স্থানীয় পাবেল নামে এক ব্যক্তির কাছে আশি হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ওই টাকা দিয়া এলাকার সড়ক নির্মাণ করা হবে। ওই গরু দুইটির মালিক পাওয়া যায়নি তাই বিক্রি দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দশমিনা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল মাহামুদ লিটন জানান, স্থানীয়রা একটি ইফতার পার্টির আয়োজন করে। সেখানে আমি অংশ নেই। গরু চোরের শালিস এবং চোরাই গরুর বিক্রির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে এড়িয়ে যান।

Exit mobile version