Site icon Jamuna Television

প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সহযোগিতা করছে সন্ধানী

প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সহযোগিতা করছে সন্ধানী

সন্ধানীর মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেলে প্লাজমা দান করছেন একজন করোনাজয়ী।

করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থ করে তুলতে বিশ্বজুড়ে পরীক্ষামূলকভাবে প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ চলছে। এ পদ্ধতিতে ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ ভাইরাস জয় করা ব্যক্তিদের প্লাজমা সংগ্রহ করে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ট্রান্সফিউশন করা হয়। বাংলাদেশেও প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। করোনা জয় করা ডোনারদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ট্রায়াল সম্পর্কিত টেকনিক্যাল কমিটিকে প্লাজমা সংগ্রহ করতে সহায়তা করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সন্ধানী’।

জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনা জয়ী ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বপ্রথম প্লাজমা দান করেন ডা. জোয়ার্দার রাকিন মঞ্জুর। পরবর্তীতে সন্ধানীর প্রচেষ্টায় গত ১৪ মে স্বেচ্ছায় প্লাজমা দান করেছেন দেশের প্রথম নন-মেডিকেল ব্যক্তি জনাব তাসনিম সোহেল আকাশ। তিনি ঢাকার অধিবাসী এবং পেশায় একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো ব্যক্তি করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর তার শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থতা লাভের পরেও এই অ্যান্টিবডিগুলো রক্তের প্লাজমায় বিদ্যমান থাকে। বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ বিষয়ে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির তৈরি করা প্রটোকল নৈতিক মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্লাজমা থেরাপি নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের উপসর্গ মুক্তির ২৮ দিন পরে অথবা করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির প্রথম আরটি পিসিআর টেস্ট পজিটিভ হওয়ার পর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসলে, তৃতীয় টেস্টের স্যাম্পল সংগ্রহের ১৪ দিন পর একজন সুস্থ ব্যক্তি প্লাজমা দান করতে পারেন। ৬০ কেজি ওজনের একজন সুস্থ ব্যক্তি ৪০০ মিলি প্লাজমা দান করতে পারেন। এফেরেসিস মেশিনের মাধ্যমে এই প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়।

সন্ধানীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মির্জা মিনহাজুল ইসলাম হৃদয় জানান, আমরা সন্ধানী থেকে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের প্লাজমা দানে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। অনেকেই আমাদের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন। তবে, সামাজিক ভ্রান্তি, কুসংস্কার, ভয় থেকে অনেকে প্লাজমা দিতে চান না।  অনেকে আবার শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণেও প্লাজমা দিতে পারছেন না। আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসায় প্লাজমা দানে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা সন্ধানীর সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে প্লাজমা দান করতে পারবেন। এ জন্য নাম, বয়স, ফোন নম্বর এবং সর্বশেষ করোনাভাইরাসের নেগেটিভ টেস্ট রিপোর্ট জানিয়ে সন্ধানীর ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/sandhanicentralcommittee/) মেসেজ পাঠাতে পারেন।
অথবা নির্ধারিত নম্বরে (০১৭৯১৯৫২৩৫৩, ০১৭৮৫৬৪৮৬২২) যোগাযোগ করতে পারেন।

প্লাজমা দাতা সংগ্রহের পাশাপাশি মেডিকেল এবং ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত এই সংগঠনটি দেশের ২৬টি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে অবস্থিত সন্ধানীর ইউনিটসমূহ এবং ৬৪টি জেলায় সন্ধানী ক্র্যাক প্লাটুন ভলান্টিয়ার টিমের  মাধ্যমে অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ এবং মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্তদাতা সরবরাহ করছে। সেই সাথে, ডাক্তার, মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের জন্য বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, স্বাস্থ্য কর্মীদের পিপিই বিতরণসহ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে সন্ধানী।

উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দরিদ্র সহপাঠীকে নাস্তার টাকা যোগাড় করে দেয়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান- সন্ধানী। স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনের পথিকৃৎ, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এই প্রতিষ্ঠানটি সুদীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে মুমূর্ষু রোগীদের রক্ত দিচ্ছে, অন্ধ মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে কর্ণিয়া দিচ্ছে এবং অসহায় মানুষকে ত্রাণ বিতরণসহ বহুমুখী সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

Exit mobile version