Site icon Jamuna Television

করোনা চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করছে আইসিডিডিআরবি

করোনা চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করছে আইসিডিডিআরবি

করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় পরজীবীনাশক ওষুধ আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের ওপর এই  ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ পরিচালনা করছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা সংস্থাটি।

আজ বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আইসিডিডিআরবি এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক বা পরজীবীনাশক ওষুধ আইভারমেকটিনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়েটিক ডক্সিসাইক্লিন, অথবা শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলক গবেষণা শুরু করেছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হবে।

করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ঢাকার চারটি হাসপাতালের ৭২ জন রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গবেষণাটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সঙ্গে শুরু হয়েছে। বাকি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তাদের এ গবেষণায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। দুই মাসের মধ্যে এই গবেষণা শেষ হবে।

আইসিডিডিআরবি জানিয়েছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি ওষুধ যা ১৯৮০ সাল থেকে পরজীবীজনিত সংক্রমণ প্রশমনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেক ধরনের ভাইরাসনাশক হিসেবেও এটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইভারমেকটিনের সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন অথবা শুধু আইভারমেকটিনের সাহায্যে চিকিৎসা দিলে ভাইরাসের সংক্রমণ কমার হার এবং জ্বর ও কাশি কমতে কতদিন সময় লাগে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য।

এছাড়া, এই গবেষণায় অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তন, অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও রোগী কেন ৮৮ শতাংশের বেশি অক্সিজেন স্যাচুরেশন ধরে রাখতে পারে না, রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ ও হাসপাতালে ভর্তি থাকার দিনের সংখ্যায় পরিবর্তন এবং এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করা হবে।

আইসিডিডিআরবি জানায়, ৪০ থেকে ৬৫ বছর বয়সী আগ্রহী রোগীদের এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যারা মৃদু অসুস্থ এবং সাত দিনের কম সময়ব্যাপী অসুস্থতায় ভুগছেন এমন রোগীদেরকে এই গবেষনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গবেষণায় ব্যবহৃত ওষুধ অ্যালার্জি আছে, হৃদরোগ, কিডনি এবং লিভারের সমস্যা আছে, এবং গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ান এমন মহিলাদেরকে এই গবেষণার আওতায় রাখা হবে না। গবেষণার আওতাভুক্ত একটি দলের রোগীরা এক ডোজ আইভারমেকটিন-এর সঙ্গে পাঁচ দিনব্যাপী ডক্সিসাইক্লিন পাবেন, অপর একটি দল পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিদিন শুধু একটি করে আইভারমেকটিন পাবেন এবং তৃতীয় দল পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিদিন একটি করে প্লাসিবো পাবেন।

গবেষণার রোগীদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। হাসাপাতাল থেকে ছাড়ার ছয় সপ্তাহ পর পুনরায় পর্যবেক্ষণ করা হবে। গবেষণার আওতাভুক্ত সকল রোগী তাঁদের অবস্থা অনুযায়ী প্রচলিত কোভিড-১৯ চিকিৎসা সেবা পাবেন বলে জানায় এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

গবেষণার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, এই ভাইরাসের দ্রুত বিস্তারের কারণে আমাদের প্রয়োজন সার্স-সিওভি-২ এর বিরুদ্ধে কার্যকর একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খুঁজে বের করা। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের কাছে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা করার মতো কোনো ওষুধ নেই এবং এ ধরনের ওষুধ আবিষ্কার হতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে। তাই, আমাদের এমন ওষুধ খুঁজে বের করা প্রয়োজন যা বাজারে সহজলভ্য, যার ওপর যথেষ্টভাবে গবেষণা করা হয়েছে, যার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কম এবং যা জীবন বাঁচাতে সক্ষম

আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক জন ডি ক্লেমেন্স বলেন, বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি সাশ্রয়ী মূল্যের ও সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, এই গবেষণাসহ অন্যান্য দেশে চলমান গবেষণার ফলাফল ইতিবাচক হলে কোভিড-১৯ মহামারীর জন্য আইভারমেকটিন একটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের ও সহজপ্রাপ্য সমাধান হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।

Exit mobile version