Site icon Jamuna Television

‘কালো নারী’ পুরস্কারের বারোয়ারি কথা

কমপক্ষে ডজনখানেক সিনেমা শিল্প থাকলেও ভারতীয় সিনেমা বলতে কমবেশি সবাই মুম্বাই কেন্দ্রিক হিন্দি ভাষায় নির্মিত বলিউডি সিনেমাকে বুঝে থাকে। শতবর্ষী এই সিনেমা শিল্প পার করেছে সময়ের নানা রঙ-ঢঙ। বদলেছে নিজেকে যুগের চাহিদায়; আবার একই সঙ্গে বদলিয়েছে দর্শক-শ্রোতাদের মনন ও রুচিকে।

দর্শকদের সামনে হাজির করেছে অন্য এক দুনিয়া। জাগিয়ে তুলেছে ভেতরকার আবেগ, পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ভালোবাসার নানা বর্ণ-সৌরভের সঙ্গে, কখনও কাঁদিয়েছে কখনও হাসিয়েছে, এমনকি অসাধ্যকে জয়ে আমাদের ভেতরকার দুর্দমনীয় বাসনাতে ধরিয়েছে দিয়েছে দুঃসাহসিক মানসিকতার আগুন।

আর কিছু সময় বাকি আছে হিন্দি সিনেমার অন্যতম সেরা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি’র মঞ্চ ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারের জাকালো আয়োজনের। ৬৩তম এই আসরে বিগত বছরের সেরাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে একেকটি ‘ব্ল্যাক লেডি ট্রফি বা ‘কালো নারী পদক’। এই অবসরে ‘কালো নারী’ পুরস্কারের কিছু স্মরণীয়-বরণীয়, এবং মজার কিছু তথ্য জেনে নিলে মন্দ হবে না নিশ্চয়!

ব্ল্যাক সিনেমার একটি দৃশ্য

সেরা একক ছবি

একক ছবি হিসেবে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১১টি ‘কালো নারী পদক’ জয় করেছে ব্ল্যাক। রানী মুখার্জি ও বিগ বি অভিনীত এ সিনেমাটি ২০০৫ সালে মুক্তি পায়। এরপর তালিকায় রয়েছে শাহরুখ খান ও কাজল অভিনীত ১৯৯৫ সালের সিনেমা ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, জয় করেছে ১০টি ব্ল্যাক লেডি। এরপরই রয়েছে ১৯৫৮ সালের মধুমতি, ১৯৯৪ সালের ১৯৪২ সালের এ লাভ স্টোরি, ২০০০ সালের কহো না … পেয়ার হ্যায়, এবং ২০১৫ সালের বাজিরাও মাস্তানি। এ সিনেমাগুলোর প্রত্যেকটি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারের আসরে ৯টি করে ব্ল্যাক লেডি জয় করেছে।

সামপুরান সিং কালরা

সেরা পুরুষ ব্যক্তিত্ব

সবচেয়ে বেশি ২০টি ব্ল্যাক লেডি জয় করেছেন সামপুরান সিং কালরা। ভাবছেন এ আবার কে, হিন্দি সিনেমা এতো দেখলাম এর নাম তো কখনও শুনিনি। আসলে ওটা তার আসল নাম, ওই নামে তাকে নাইবা চিনতে পারেন। কবি, গীতিকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক- এই অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী মানুষটিকে সবাই গুলজার নামে চেনে।

গুলজারকে পেছনে কেউ ফেলতে পারবেন কিনা এই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধীরা সবাই এ পর্যন্ত ১৫টি করে ব্ল্যাক লেডি জয় করেছেন। জনপ্রিয়তা ও চেনা-জানার হিসেবে তারা কিন্তু আবার গুলজারের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল। এই উজ্জ্বল নক্ষত্ররা হলেন এ আর রহমান, শাহরুখ খান, এবং অমিতাভ বচ্চন।

আশা ভোসলে

সেরা নারী ব্যক্তিত্ব

যুগ্মভাবে শীর্ষে আছেন দুই ঘরানার দুই জন; একজন গায়িকা, অপরজন নায়িকা- আশা ভোসলে ও জয়া বচ্চন। তারা দুই জনই ৯টি করে ব্ল্যাক লেডি জয় করেছেন। এরপরে রয়েছেন সরোজ খান। বাকি দুই জন বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার জয় করলেও সরোজ খান ৮টি ব্ল্যাক লেডিই পেয়েছেন শুধুমাত্র কোরিওগ্রাফ্রিতে!

বিমল রায়

সেরা পরিচালক

তিন জন পরিচালকই চার চারটি করে ব্ল্যাক লেডি পেয়েছেন- যশ চোপড়া, রাজ কাপুর, এবং সঞ্জয় লীলা বানসালি। বাকি দুই জনই প্রয়াত, সুতরাং সঞ্জয়ের কাছে সুবর্ণ সুযোগ এগিয়ে যাওয়ার। এ জন্য অবশ্যই তাকে দেখাতে হবে অসাধারণ কোনো লীলা খেলা। ইতিমধ্যে পদ্মাবত নিয়ে বেশ ঝক্কি গেছে তার; কে জানে এ দিয়ে হয়তো তিনি বাজিমাত করেও ফেলতে পারেন।

তবে এ তালিকায় সবচেয়ে সেরাকে টপকাতে হতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে বাকিদের, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা ৭টি ব্ল্যাক লেডি জয় করে এখনও সবার উপরেই আছেন বিমল রায়।

এক ফ্রেমে এসআরকে ও দিলীপ কুমার

সেরা অভিনেতার পুরস্কার

সবেচেয়ে বেশি সেরা অভিনেতার পুরস্কার জয়ের আসনটি ইতিমধ্যে শাহরুখ খান ভাগাভাগি করে নিয়েছেন আরেক কিংবদন্তি নায়ক দিলীপ কুমারের সঙ্গে। দু’জনই পেয়েছেন ৮টি করে ব্ল্যাক লেডি। দিলীপ কুমার শয্যাশায়ী হয়ে পড়লেও পঞ্চাশর্ধ্বো শাহরুখ খান বেশ টগবগে তরুণ! তাই পঞ্চতিপর এ যুবার সামনে রেকর্ড একান্ত নিজের করে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আর এ কাজে এসআরকে ভালোই সিদ্ধহস্ত।

নায়িকা নুতান

সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার

এ তালিকায় সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পাওয়াদের বেশির ভাগই অবসরপ্রান্ত নয় তো বলতে গেলে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে আছেন। ৫টি করে ব্ল্যাক লেডি জয় করে শীর্ষে আছেন নায়িকা নুতান ও কাজল। এরপর আছেন মীনা কুমারী এবং মাধুরী দিক্ষিত। তারা দুজনই ৪টি করে ব্ল্যাক লেডি জিতেছেন।

আল্লা রাখা রহমান

সেরা সংগীত পরিচালক

নামটা মনে হয়, না বললেও চলবে। হাল আমলের সবচেয়ে প্রথিতযশা সংগীত পরিচালক, না চেনে উপায় আছে? তার পরিচালনায় সৃষ্ট সংগীত পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম জয় করে ফেলেছে, এমনকি উত্তর-দক্ষিণও বাদ যায়নি। দশ দশটি ব্ল্যাক লেডি জয় করে আল্লা রাখা রহমান আছেন সবার শীর্ষে। বয়স তো খুব বেশি হয়নি, আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে আল্লা রাখা কোথায় গিয়ে থামেন সেটাই দেখার বিষয়! তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শংকর জয়কিষাণ জুটি, তারা জিতে ছিলেন ৯টি ব্ল্যাক লেডি।

অনেক বলা হয়েছে কে কে, কি কি পেয়েছে। ওসব ফলাফলের কথাজানতে কতক্ষণ ভালো লাগে। এবার না হয়, একটু অন্য রকম কিছু জানা যাক।

লতা মঙ্গেশকর

কিংবদন্তি কণ্ঠ শিল্পী লতা লতা মঙ্গেশকর, ১৯৭১ সালে, ফিল্ম ফেয়ার কর্তৃপক্ষকে তার নাম নমিনেশনের তালিকায় না রাখতে অনুরোধ করেছিলেন। নবাগত মেধাবী শিল্পীদের জায়গা করে দিতে তিনি এ অনুরোধ করেন। বোন লতার পথই অনুসরণ করলেন আশা ভোসলে, তিনি ১৯৭৯ সালে ৭তম বারের মতো সেরা গায়িকা হিসেবে ব্ল্যাক লেডি জয়ের পর আয়োজক কর্তৃপক্ষকে তার নাম এরপর থেকে আর নমিনেশন তালিকায় না রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত এ বিভাগে তার সমান সংখ্যক ব্ল্যাক লেডি জয় করেছেন অলকা ইয়াগনিক। এরপরে রয়েছেন শ্রেয়া ঘোষাল, তিনি জিতেছেন ৫টি ব্ল্যাক লেডি।

মহান শিল্পীদের পক্ষেই সম্ভব, জাগতিক এই সব পুরস্কারের উর্ধ্বে উঠে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার তপস্যাটাই মুখ্য করে রাখতে। কিংবদন্তিদের কথা আলাদা, কিন্তু সব গুণী শিল্পী কি এমন হন? উঁ হু, হন না। এদের কেউ কেউ ক্ষণিকের মোহে করে ফেলেন বড় ধরনে ভুল, যদিও পরে তা স্বীকার করেন। এমনই একজন হলেন ঋষি কাপুর।

ঋষি কাপুর

এ বছরের ফিল্ম ফেয়ার আসরের আগে তার মুক্তি প্রাপ্ত জীবনী ‘খুল্লাম খুল্লা’য় তিনি স্বীকার করেছেন, ববি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ১৯৭৩ সালের ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারের সেরা অভিনেতা পদকটি কিনে নিয়েছিলেন। জাঞ্জির সিনেমায় অভিনয়কারী অমিতাভ বচ্চন যাতে পুরস্কারটি না পান, তাই তিনি এ কাজ করেছেন। সে যাই হোক কাপুর পরিবার বলে কথা!

এ ধরনের সত্য ঘটনা ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে; আবার কেউ এ ধরনের বিষয় ছিটেফোঁটা ঘটনা বলে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিতে পারেন।

তবে সব কথার শেষ কথা; দর্শকদের কাছে সিনেমা দেখেই আনন্দ। কে পুরস্কার পেল, কে পেল না; সেটা মোক্ষ নয়।

যমুনা অনলাইন: এফএইচ

Exit mobile version