Site icon Jamuna Television

৩০ বছর পর জানলেন তিনি মহিলা নন পুরুষ

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভারতের নিউ গড়িয়ার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ক্যান্সার হাসপাতালে আসেন এক রোগী। বেশ কিছু দিন ধরে তার তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল। পরে সিটি স্ক্যান করে দেখা গেল তার তলপেটে ১৫-২০ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার।

চিকিৎসকেরা জানান, ওই টিউমারটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটি আসলে অণ্ডকোষ। যা শরীরের বাইরের বদলে তার শরীরের ভিতরে রয়েছে এবং বায়োপ্সি করে টিউমারে ক্যান্সার মেলে।

এরপরই রহস্যের জট খুলতে থাকে। তিরিশ বছর ধরে যিনি নিজেকে মহিলা বলেই জানতেন তিনি আসলে পুরুষ। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরে জানলেন তার আসল পরিচয়। চিকিৎসকেরাও এমন ঘটনাকে বিরল এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের দিক দিয়ে লক্ষ্যণীয় বলে মনে করছেন। ওই রোগীর এখন ২১ দিন পর পর কেমোথেরাপি চলছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। খরব আনন্দবাজারের।

বহিরঙ্গে তিনি পুরোপুরি মেয়েদের মতোই। গলার স্বর থেকে শুরু করে স্তন সবই মেয়েদের মতো। যোনির গঠনও বহিরঙ্গে নারীসুলভ। বিয়ে হয়েছে ৯ বছর আগে। তবে জন্ম থেকেই তাঁর জরায়ু ও ডিম্বাশয় ছিল না; পিরিয়ড হয়নি।

শুধু ওই রোগী নন, সন্দেহ হওয়ায় তার ২৮ বছর বয়সি বোনেরও জিন পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। দেখা গিয়েছে তিনিও পুরুষ।

ওই রোগীর বোন বলেন, ‘কৈশোরে যখন আমাদের পিরিয়ড হল না, তখন ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। ডাক্তার বলেছিলেন, আমাদের ওভারি আর ইউটেরাস নেই, ফলে কোনও দিন সন্তান হবে না। সেটা জানিয়েই দিদির বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু কখনও কেউ বলেননি যে, আমরা আসলে মহিলাই নই।

হাসপাতালের সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট সৌমেন দাস এবং ক্লিনিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট অনুপম দত্তের মতে, ‘পুরুষদের যে ক্যান্সার হয়, এটি সেই ধরনের টেস্টিকিউলার ক্যান্সার। একে চিকিৎসা পরিভাষায় সেমিনোমা বলা হয়।’

সৌমেনবাবু জানান, ‘পরীক্ষা করে দেখা যায়, তার যোনি রয়েছে ঠিকই; কিন্তু সেটি ‘ব্লাইন্ড এন্ডেড’, অর্থাৎ শুরু হয়েই শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের তখন সন্দেহ হয়। রোগীর ‘কেরিওটাইপিং’ অর্থাৎ ক্রোমোজোম পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, তার শরীরের কম্বিনেশন হল ‘XY’ ক্রোমোজোম, যা পুরুষদের থাকে। নারীদের শরীরে থাকে XX ক্রোমোজোম।’

সৌমেনবাবু আরও জানান, ওই রোগীর ‘টেস্টিকিউলার ফেমিনাইজেশন সিনড্রোম’ রয়েছে। তার অণ্ডকোষ যেহেতু শরীরের ভিতরে ছিল এবং সুগঠিত ছিল না, তাই পুরুষ হরমোন ‘টেস্টোস্টেরন’ ঠিক ভাবে ক্ষরণ হয়নি। বরং তার দেহে মহিলা হরমোন তুলনায় বেশি ছিল। তাই বহিরঙ্গে তিনি একেবারে মহিলার মতো।

জানা গিয়েছে, ওই রোগীর দুই মাসিরও একই সমস্যা ছিল। অর্থাৎ এমনিতে মহিলা বলে মনে করা হলেও তাঁদের জরায়ু ও ডিম্বাশয় ছিল না।

Exit mobile version