Site icon Jamuna Television

আধুনিকতার মাঝেও টিকে আছে মহেশপুরের ঘানি ভাঙা শিল্প

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ নানা প্রতিকুলতার মাঝেও আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে গ্রাম বাংলার পুরাতন ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসবের মধ্যে কলুর বলদ অন্যতম।

আগে কলুর বলদের মাধ্যমেই ঘানি ভেঙ্গে তেল তৈরী করা হতো গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে। কিন্তু প্রযুক্তির ছোঁয়ার ফলে এখন আর নেই সেই ঘানি, বা ঘানি ভেঙে তেল তৈরির প্রক্রিয়াটি। তবে বর্তমান সময়ে এখনো অনেকেই লাভ-ক্ষতির হিসেবে না গিয়ে সন্ধান করে চলেছেন প্রাকৃতিক বিশুদ্ধতার।

বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে আজও সংগ্রাম করে যাচ্ছেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ। যেখানে রয়েছে কলু, কলুর বলদ, চটকা কড়াই কাঠ ও বাবলা কাঠ মিশ্রিত ঘানি। রয়েছে দেশি সরিষা আর শতভাগ বিশুদ্ধতা।

কাঠের বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো হাতে তৈরি যন্ত্রের চারিদিকে নির্বিকারভাবে ঘুরে চলেছে কলুর বলদ, তার দুই চোখ বাঁধা বাঁশের তৈরি বিশেষ ধরণের দুটি ছোট ঝুড়ি আর তার উপর কাপড় দিয়ে।

কোন রকম অসম্মতি ছাড়াই অনবরত ঘুরে চলছে গরু, আর তৈরি হচ্ছে তেল দেশি সরিষার খাঁটি তেল। ফোটায় ফোটায় তেল জমা হচ্ছে নিচে রাখা পাত্রে। উপজেলার বলিভদ্রপুর, একতারপুর, কানাইডাঙ্গা, বজরাপুর গ্রামের বাসিন্দারা এসব কাজ করে যাচ্ছে।

একতারপুর গ্রামের আবু বক্কর, মোতালেব মালিথা জানান এই শিল্পের উপর তাদের পুরো পরিবারের জীবন জীবিকা জড়িত। তারা প্রত্যেকে প্রতিদিন ১২ কেজি করে ঘানি ভাঙায়। যা থেকে কোন রকম তাদের সংসার চলে।

কখনও কখনও নিজে কেনা সরিয়া, নারিকেল বা তিল ভাঙ্গিয়ে তেল তৈরি করছেন। আবার কখনো অন্যের জিনিস ভাঙ্গিয়ে তেল তৈরী করে টাকা নিচ্ছেন।

পুরন্দপুর গ্রামের আবুল কালাম জানান, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তেল তৈরিতে সময়, শ্রম ও খরচ দুটোই অনেক বেশি প্রয়োজন হয়। শক্তিশালী গরুগুলোর খাবার জোগাতেও খরচ হয় অনেক অর্থ। আর তাই এই তেলের দামটিও বেশি। তবে দাম বেশি হলেও প্রায় দুষ্প্রাপ্য এই ঘানি তেলের চাহিদা ব্যাপক এই তেল দিয়ে আলু ভর্তার মত খাবার খুবই সুস্বাধু।

এব্যাপারে একতারপুর গ্রামের আবুবক্কর মালিথার স্ত্রী সোনীয়া খাতুন জানান, এপর্যন্ত কেউ কোন খোঁজও নেয়নি এবং সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা আমাদেরকে দেয়া হয়নি। তবে উষা নামে একটি এনজিও থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লোন করে বিপাকে পড়েছি।

Exit mobile version