Site icon Jamuna Television

দুর্গাপুরে সেই বন্দি ফুল মিয়াকে শেকলমুক্ত করলেন ইউএনও

স্টাফ রির্পোটার:

যমুনা টিভি’র অনলাইনে “১২ বছর জেল খেটে বাড়ি ফিরে ৩ বছর ধরে শেকলে বাঁধা বৃদ্ধ ফুল মিয়া” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সেই বৃদ্ধ ফুল মিয়াকে মুক্ত করা হলো।

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে আবদ্ধ ঘরে ৩ বছর ধরে শেকলবন্দি জীবন থেকে মুক্তি কামনা করে শনিবার এ সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসে।

শনিবার জেলা প্রশাসক মঈন ইসলামের নিদের্শে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম ওই বৃদ্ধ ফুল মিয়াকে নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করে শেকল মুক্ত করেন। এ ঘটনায় স্থানীয় ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিগণ উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।

শেকল বন্দি থেকে মুক্তি পেয়ে ওই বাড়ির উঠোনে বৃদ্ধ ফুল মিয়া উপস্থিত ইউএন ও ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান।

স্থানীয়রা জানান, বিরিশিরি ইউনিয়নের পিপুলনারী গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর পুত্র ফুল মিয়ার মাথায় সমস্যা বলে তিন বছর ধরে তার সন্তানরা একটি নির্জন কক্ষে পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখে। শনিবার সংবাদটি প্রশাসনের দৃষ্ঠিগোচর হলে তাঁকে শেকল মুক্ত করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফুল মিয়া মাটির নিচ থেকে প্রায় সতেরো বছর আগে (ধাতব জাতীয়) মূল্যবান একটি পাথর খুঁজে পান। সেটি ২০০৩ সালে চৈত্র মাসের শুরুর দিকে। পাথরটি তার স্ত্রীর কাছে দেন লুকিয়ে রাখতে। ফুল মিয়া ওই পাথরটি বিক্রি করতে পার্টির খোঁজে বের হন।

 

কিছুদিন পরে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর কাছে পাথরটি চাইলে, তখন তার স্ত্রী বলে পাথরটি নাকি সুরুজ মিয়া ও মাওলানা রফিকুলের কাছে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন।

এ কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে ফুল মিয়া ঘরে থাকা বটি দিয়ে তার স্ত্রীকে গলায় কোপ দেয়। ঘটনাস্থলেই স্ত্রী আমেনা খাতুন মারা যান। ২০০৩ সালের বৈশাখ মাসের ৬ তারিখ এ হত্যার ঘটনা ঘটে বলে জানান বৃদ্ধের পুত্র আবু হানিফা।

খবর পেয়ে পুলিশ ফুল মিয়াকে গ্রেফতার করে। নিহতের ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলায় ১২ বছর ৫ মাস ১৭ দিন জেল খাটেন ফুল মিয়া। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দীর্ঘদিন এলাকায় ঘোরাফেরা করে।

পরে পাথর বিক্রি করে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে অনেকের সাথে বলাবলি করলে ক্ষেপে যান সুরুজ মিয়া ও রফিকুল ইসলাম। এরই জের ধরে ফুল মিয়ার পুত্রদের অসহায়ত্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পিতাকে শেকলবন্দি করে রাখার মত দেন সুরুজ আলী ও রফিকুল ইসলাম।

হঠাৎ করে ঘরে বন্দি করে দুই পায়ে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় ফুল মিয়াকে। শেকল বন্দি ৩ বছরেও আলোর মুখ দেখেননি ফুল মিয়া।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম বলেন, ওই বৃদ্ধকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি। আমি নিজে ওই বৃদ্ধের বাড়িতে গিয়ে শেকলবন্দি থেকে অবমুক্ত করে আসছি। যারা এটি ঘটিয়েছে নিঃসন্দেহে অমানবিক কাজ করেছে। আমি ধন্যবাদ জানাই এরকম একটি অনুসন্ধানী মূলক রিপোর্ট যমুনা টিভি’র অনলাইনের মাধ্যমে উঠে এসেছে বলে।

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলাম জানান, সংবাদটি প্রকাশের পর ইউএনও’র মাধ্যমে ফুল মিয়াকে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Exit mobile version