Site icon Jamuna Television

‘আমার ছেলেকে ছয় ঘণ্টা নির্যাতন করে হত্যা করা হয়’

নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ফাইল ছবি।

আমার ছেলেকে টানা ছয় ঘণ্টা অমানবিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার সময় এ কথা বলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা বরকতউল্লাহ।

সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এদিন, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২২ জন বুয়েট ছাত্রকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর ১২টার দিকে আদালতের নির্দেশে আবরারের বাবা সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ান। তিনি যখন সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, তখন আসামিরা চুপ ছিলেন।

আদালতকে বরকতউল্লাহ বলেন, তার ছেলে আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে থেকে লেখাপড়া করতেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফজরের আজানের পর লোক মারফত জানতে পারেন, তার ছেলেকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মারধর করে গুরুতর জখম করে হত্যা করা হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তিনি বুয়েটের শেরেবাংলা হলে যান।

আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে তিনি জানান, হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ও হলের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনি জানতে পারেন হলের ছাত্র মেহেদী হাসান রাসেল, ফুয়াদ, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ, মেহেদি হাসান রবিন, মনিরুজ্জামান, মিফতাহুল ইসলাম, মাজেদুর রহমান, তানভীর আহমেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, জিসান, আকাশ, মশিউর, তানিমসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন বুয়েট শিক্ষার্থী তার ছেলেকে গত বছরের ৬ অক্টোবর রাত আটটা পাঁচ মিনিটের দিকে হত্যার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যান। রাত ৮টা ৫ মিনিট থেকে রাত ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত হলের ২০০৫ নম্বর কক্ষে আবরার ফাহাদকে লাঠিসোঁটা এবং দড়ি দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করেন আসামিরা। পরে ঘটনাস্থলে তার ছেলে মারা যান। আসামিরা তার ছেলের মৃত্যু নিশ্চিত করেই হলে দ্বিতীয় তলার মৃতদেহ ফেলে রেখে দেন। পরে কতিপয় ছাত্র তাঁর ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁর ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তিনি চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন।

আবরারের বাবার জবানবন্দি শেষ হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী মাহবুব আহমেদ তাকে জেরা শুরু করেন। কীভাবে তিনি ছেলে আবরারের মৃত্যুর সংবাদ পান, কীভাবে সেদিন ঢাকায় আসেন, কীভাবে মামলার এজাহার দায়ের করেন, সে-সংক্রান্ত নানা জেরার জবাব দেন বরকতউল্লাহ।

গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটে শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ২১ জানুয়ারি অভিযোগপত্রটি আমলে নেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত। বর্তমানে তিন আসামি পলাতক।

Exit mobile version