Site icon Jamuna Television

শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পরও হলে থাকবেন জাবি শিক্ষার্থীরা

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ক্লাস ও হল খুলে দেয়ার ঘোষণার পরও হলে অবস্থান করার কথা জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, ‘এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সেসব এলাকায় অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ নয়। এছাড়া এলাকাবাসী খাবারের দোকানগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি যারা মেসে গিয়ে খাবার বিক্রি করতো তাদেরকেও খাবার সরবরাহ করতে নিষেধ করে দিয়েছে। এমন অবস্থায় খাবার সংকটে আছে শিক্ষার্থীরা। তাই এমন অবস্থায় আমাদের হলে থাকার বিকল্প নেই। আমরা হলেই অবস্থান করবো।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শারমীন আক্তার সাথী বলেন, ‘আমরা হলে অবস্থানের সিদ্ধান্তে এখনো অটল আছি এবং আজকেই পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ছাত্রী হলে শিক্ষার্থীরা উঠবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের পর আমরা শিক্ষার্থীদেরকে বোঝাচ্ছি। আশা করছি শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।’

এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন এক জরুরী বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদেরকে সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে নিজ উদ্যোগে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তি রবিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে দেয়া হয়।

কিন্তু এই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলেই অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘নিরাপত্তার কারণে তারা হলে অবস্থান নিয়েছেন এবং প্রশাসনের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিতে তারা হল ছেড়ে যাবেন না।’

এদিকে বিজ্ঞপ্তির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করলে সংশ্লিষ্ট হল প্রশাসন হল ছেড়ে দিতে শিক্ষার্থীদেরকে অনুরোধ জানান। তবে হল প্রশাসনের অনুরোধে সাড়া দেয়নি শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রতিটি হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের চলে যেতে বলেছি। তারা আমাদের প্রস্তাব মানেনি। পরে প্রভোস্টরা ফিরে আসেন।’

হল না ছাড়া বিষয়ে নগর অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী সোলাইমান কবির বলেন, ‘পরশু হামলার ঘটনার পর স্থানীয় এলাকায় আমাদের নিরাপত্তা নেই। স্থানীয় বাসা মালিকরা আমাদের বাসা ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন নির্দেশ আমাদের হতাশ করছে। একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকাটা মানায় না বরং তাদের উচিত শিক্ষার্থীদের কথা ভাবা।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে শুরু হয়ে মেয়েদের হলের দিকে যায়। তারপর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের তালা ভেঙ্গে ছাত্রীর হলে প্রবেশ করে। এরপর দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো- প্রশাসনের দেয়া প্রজ্ঞাপন ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে, কোনভাবে হল থেকে বের করার চেষ্টা করা যাবে না, আগামী ২৪ ঘণ্টার মাঝে গেরুয়ার সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে ও এর ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করতে হবে, ক্যাম্পাসের কতিপয় ছাত্র শিক্ষক ও কর্মচারী ও কর্মকর্তা এই হামলার ঘটনার সাথে সংযুক্ত আছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে, অজ্ঞাত মামলা তুলে নিয়ে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নামে মামলা করতে হবে।

এদিকে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্টার (নিরাপত্তা) জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলসমূহ খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদও হল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

Exit mobile version