Site icon Jamuna Television

কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় গৃহবধূকে তাড়িয়ে দিল শ্বশুর-শাশুড়ি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

মেয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে রোকসানা খাতুন (২৩) নামে প্রসূতি মাকে বাড়িতে উঠতে না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করেও রোকসানাকে শ্বশুর বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বরং শ্বশুরবাড়ির লোকজন তিন মাস আগে তালাক দেওয়া কথা জানায় বলে অভিযোগ রোকসানার। শেষ পর্যন্ত চার দিন বয়সের নবজাতক মেয়ে সন্তানকে নিয়ে মা রোকসানা খাতুনের ঠাঁই হয়েছে তার বাবার বাড়িতে। রোকসানা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামের লুৎফর মিয়ার মেয়ে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোরামারা গ্রামের স্বামীর বাড়ির উঠান থেকে নবজাতকসহ রোকসানাকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পলাতক শ্বশুর মহব্বর আলীসহ তার পরিবারের লোকজন। স্বামী রাজু মিয়া ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে (খাবার হোটেল) কর্মরত।

তবে মুঠোফোনে রাজু মিয়ার মা আসমা বেগম ছেলে বউ রোকসানার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করাসহ তিন মাস আগে তালাক দেওয়া কথা জানান।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, এক বছর আগে রাজু মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় রোকসানা খাতুনের। গত আড়াই মাস আগে ডাক্তারি পরীক্ষায় রোকসানার গর্ভে কন্যা সন্তানের বিষয়টি নিশ্চিত হয় স্বামী রাজু মিয়াসহ তার পরিবার। এরপর থেকেই রোকসানার ওপর নেমে আসে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির অমানুষিক নির্যাতন। কখনও অপরাধ করলেও মারপিট; আবার কখনও যৌতুক চেয়ে নির্যাতন চলে আসছিল মেয়েটির উপর।

এ অবস্থায় ৮ মার্চ স্বামীর বাড়িতে প্রসব বেদনা উঠলে রোকসানাকে রংপুরের সালেহীন ক্লিনিক নেওয়া হয়। সেখানে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেয় রোকসানা। ক্লিনিকে চারদিন থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে কন্যা সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি ঘোড়ামারায় আসেন রোকসানা। কিন্তু রোকসানাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়নি শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজন। এসময় বাড়ির মুল গেটে তালা ঝুলিয়ে চলে যায় শ্বশুর-শাশুড়ি। সন্ধ্যা পর্যন্ত রোকসানা বাড়ির বাহিরে অবস্থান করে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়িতে নিয়ে যায়।

রোকসানা খাতুনের অভিযোগ, ছেলে সন্তান চাওয়া ছিলো স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনের। কিন্তু মেয়ে সন্তানের খবর জানার পর থেকেই তাকে নানাভাবে নির্যাতন করতো স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িসহ তার এক জা।

সন্তান জন্মের পর স্বামীর বাড়িতে আসলে তাকে কেউ বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। বরং শ্বশুর ও শাশুড়ি তাকে জানিয়ে দেয় তিনমাস আগে তালাক দেওয়ার কথা। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়িতে ঢুকতে না পেরে ফোন করি জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসে।

দীর্ঘসময় বাহির বাহিরে অবস্থান করায় নবজাতকটি অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন রোকসানা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা জানান, পুলিশ পাঠিয়ে নবজাতকসহ রোকসানাকে উদ্ধার করে তার বাবার বাড়িতে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Exit mobile version